উন্নয়নের তাণ্ডবের মধ্যে আছে মানুষ: আনু মুহাম্মদ
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, উন্নয়নের তাণ্ডবের মধ্যে আছে দেশের মানুষ। যদিও সরকার বলছে উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। এটা আসলে মহাসড়ক না। মানুষের মাথার ওপর উন্নয়নের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ শ্বাস নিতে পারছে না।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘সর্বজনের অধিকার ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বেসরকারীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ–মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখা এই সেমিনারের আয়োজন করে।
শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বর্তমান সরকারের জন্য আশীর্বাদ উল্লেখ করে সেমিনারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শ্রীলঙ্কা জিডিপিসহ সব সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন কী অবস্থা দেখেন? এখানেও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সব প্রকল্পে বিদেশ সফরের জন্য টাকা খরচ করা হচ্ছে। আর জিডিপি বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে অধিকাংশ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য সরকার শুধু টাকা চায়। এ ছাড়া আর কোনো মাথাব্যথা নেই। আর দেশে এসে ঠিক উল্টো কাজই করে। দেশের উপকূল তছনছ করে ফেলছে। প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ফেলছে।
চট্টগ্রামের উন্মুক্ত স্থান পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত উন্নয়নের নামে ইজারা দেওয়া হলে সেখানে সর্বজনের প্রবেশাধিকার হরণ হবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, সৈকত এলাকায় রাইডের দরকার নেই। উন্মুক্ত থাকলে বরং শিশুরা খেলতে পারবে। বয়স্ক লোকজন হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। কিছু লোককে ব্যবসা দেওয়ার জন্য সৈকত তো ইজারা দেওয়া যেতে পারে না। আর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ইজারা নেওয়ার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ওই জায়গার মালিক মনে করবে। তখন তার ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হবে না। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত রক্ষা করতে হলে জনগণের প্রতিরোধের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, নগরের ফয়’স লেকের মতো পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বিত্তবানদের বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হোক, তা হতে দেওয়া যায় না। তাই এই সৈকত বাঁচাতে আন্দোলন করতে হবে।
বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলার আহ্বায়ক মানস নন্দীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সিআরবি রক্ষা মঞ্চের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান, পরিকল্পিত চট্টগ্রামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। সংগঠনের সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবিরের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইদ্রাণী ভট্টাচার্য।