এক বাংলাদেশ, দুই বিপরীত চিত্র

উন্নয়ন ও সুশাসন একে অপরের পরিপন্থী নয়। বস্তুত সুশাসনের একটা লক্ষ্য উন্নয়নের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেওয়া।

২০২১ সালের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশের দুটি চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথম চিত্রটি সাফল্যের, দ্বিতীয়টি হতাশার। প্রথম চিত্র অনুসারে বাংলাদেশ অভাবিত সাফল্য অর্জন করেছে, এখন তৃতীয় বিশ্বের এক অভাবী দেশ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে মধ্য আয়ের দেশ হতে চলেছে। একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে সে এখন এশিয়ার এক তেজি ষাঁড়। এই চিত্র অনুসারে বাংলাদেশে এখন আবার গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ ও মানুষের পকেটে এন্তার অর্থ।

দ্বিতীয় চিত্রটি ঠিক উল্টো। এই চিত্র অনুসারে কারও কারও মতে বাংলাদেশ এখন অনেকটা কর্তৃত্ববাদী দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত এক দল, এক ব্যক্তির হাতে। এটা এমন এক দেশ, যেখানে নির্বাচনে না জিতেও ক্ষমতায় থাকা যায়। মুখে নাগরিক অধিকারের পক্ষে ও দুর্নীতির বিপক্ষে কথা বলা হলেও যেখানে নাগরিক অধিকার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা অনেক। বিচারব্যবস্থা থেকে আমলাতন্ত্র, ব্যবসা–বাণিজ্য থেকে শিক্ষাক্ষেত্র, সর্বত্রই দুর্নীতির কথা শোনা যায়। আইনের শাসন নয়, সেখানে এখন আইন লঙ্ঘনের শাসন।

একই বাস্তবতার দুই বিপরীত চিত্র, এই দুটোই কি পাশাপাশি বা সমান্তরাল বাস করতে পারে? একটু ভেঙে দেখা যাক।

সাফল্যের বাংলাদেশ

জাতিসংঘ সম্প্রতি এক নীতিগত পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের বদলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উত্তরণ অর্জনের জন্য যে তিনটি পূর্বশর্ত—মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রতিকূলতা রোধ সূচক—তার প্রতিটিই সে পূরণ করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি প্রবৃদ্ধিগত অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে দেশটি ২০২৬ সাল নাগদ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, এখন এ দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার, যা পাকিস্তান ও ভারত এই দুই প্রতিবেশীর চেয়ে বেশি। সে কথা উল্লেখ করে ব্লুমবার্গ নিউজ লিখেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান (অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান) বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশ সম্পদশালী ছিল। সেখানে এখন সেই পাকিস্তানের তুলনায় ৪৫ শতাংশ অধিক সম্পদশালী বাংলাদেশ। ব্লুমবার্গ–এর নিয়মিত কলাম লেখক মিহির শর্মা এক পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদের কথা উদ্ধৃত করে বলেছেন, এটা মোটেই অবাক কোনো ব্যাপার হবে না, যদি ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা (অর্থাৎ পাকিস্তান) সাহায্যের জন্য বাংলাদেশের কাছে হাত পাতি।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এই পরিসংখ্যানগত নিরীক্ষা মোটেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের এক বাহ্য কারণ ছিল পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য। পরিস্থিতি কতটা বদলে গেছে তার এক সহজ হিসাব দিয়েছে ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। বিশ্বব্যাংকের উপাত্ত ব্যবহার করে পত্রিকাটি বলছে, উন্নয়ন সূচকের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ তার সাবেক শাসক পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের মোট অর্থনৈতিক সম্পদের পরিমাণ ছিল ১১ বিলিয়ন ডলার; একই সময় বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। এখন সেই হিসাবটা দাঁড়িয়েছে এই রকম: বাংলাদেশ (৩২৪ বিলিয়ন ডলার), পাকিস্তান (২৬৪ বিলিয়ন)। অর্থাৎ, পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ২৩ শতাংশ।

সুবিধাভোগী বলতে কেবল ক্ষমতাসীন দলের কর্তাব্যক্তিদের বোঝায় না। চলতি ব্যবস্থাকে গাভি ভেবে যাঁরা দুধ দুইয়ে চলেন, তাঁদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজভুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থা রয়েছে। তাঁরা কেউ বড় রকমের পরিবর্তনের পক্ষে নন। চলতি ব্যবস্থায় যখন বেশ গায়ে বাতাস লাগিয়ে কাটানো যাচ্ছে, তাহলে সেখানে অকারণে বিপদ ডেকে আনা কেন?

পণ্ডিতজন অবশ্য জানিয়েছেন, এই হিসাবে বাংলাদেশের সাফল্যের পুরো ছবিটা ধরা পড়ে না। মোট বিত্তের হিসাবে বাংলাদেশ অভাবিত অগ্রগতি অর্জন করেছে তা ঠিক, কিন্তু সে বিত্ত ন্যায়সম্মতভাবে দেশের সব মানুষের মধ্যে বণ্টিত হয়নি। বাস্তবিক পক্ষে, মোট বিত্ত বাড়লেও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অসাম্য আগের তুলনায় বেড়েছে অনেক বেশি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রধান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, যেখানে দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ কার্যকরভাবে দরিদ্র, সেখানে মধ্য আয় বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারি দাবি ঠিক ধোপে টেকে না।

দ্বিতীয় চিত্র

এবার বিবেচনায় আনা যাক দ্বিতীয় চিত্রটি। সুশাসন বলতে যা বোঝায়, বাংলাদেশে এখন তার বড়ই অভাব। দেশটি ক্রমান্বয়ে কর্তৃত্ববাদী, একদলীয় ও দুর্নীতিপরায়ণ একটি দেশে পরিণত হচ্ছে, এমন একটি ধারণা দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি দেশের বাইরেও আসন গেড়ে বসছে। সাফল্যের সনদ বিদেশি সূত্র থেকে পেয়েছি, আমাদের অপূর্ণতার হিসাবটাও তাদের কাছ থেকেই নেওয়া যাক।

প্রতীকী ছবি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বর্ষশেষ প্রতিবেদনে যে বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছে, তা অনুসারে দেশটি ক্রমাগত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করে চলেছে। সরকারের সমালোচকদের গ্রেপ্তার চলছে, সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কদর্য ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই শক্তির অপব্যবহার করে চলেছে। চলছে গুম–খুন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত জাতিসংঘের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ডেভিড কে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকারের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের তথ্যভান্ডারে ৬০টির মতো গুম–খুনের ঘটনা তালিকাভুক্ত রয়েছে। তিনি অবিলম্বে প্রতিটি গুম–খুনের তদন্ত ও বিচারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একাধিক বিদেশি সূত্র বাংলাদেশের চলতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করেছে। এদের অন্যতম হলো বাংলাদেশে অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরা। তাঁরা এক সম্মিলিত বিবৃতিতে এই আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হুমকি বলে অভিহিত করে তার প্রত্যাখ্যান দাবি করেছে। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সীমিত, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রিডম হাউস আবারও সে কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ‘অংশত মুক্ত’ হিসেবে রায় দিয়েছে।

উন্নয়ন সূচকের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ তার সাবেক শাসক পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের মোট অর্থনৈতিক সম্পদের পরিমাণ ছিল ১১ বিলিয়ন ডলার; একই সময় বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। এখন সেই হিসাবটা দাঁড়িয়েছে এই রকম: বাংলাদেশ (৩২৪ বিলিয়ন ডলার), পাকিস্তান (২৬৪ বিলিয়ন)। অর্থাৎ, পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশে সুশাসনের সংকট কতটা তীব্র, তার সবচেয়ে তাজা প্রমাণ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র‌্যাব ও এর বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে বাতিল করে দিয়েছে, দেশের কর্তাব্যক্তিদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের কথা না ভেবে নিজের চরকায় তেল দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেটি মূল্যবান পরামর্শ, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে দেশের বাইরে যে এই মনোভাব বেশ জেঁকে বসেছে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। একজন মার্কিন ভাষ্যকারের মতে, অনেকটা বাধ্য হয়েই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর অস্ত্র প্রয়োগ করেছে।

আরও পড়ুন

অন্য কথায়, যে পরস্পরবিরোধী চিত্রের কথা গোড়াতে উল্লেখ করেছি, এই বিস্তারিত সাক্ষ্যভাষ্য থেকে তা বাস্তব বলে মেনে নেওয়া ছাড়া সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তিদের গত্যন্তর নেই। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ঘোড়া হাঁকিয়ে ছুটে চলেছে তাতে যেমন সন্দেহ নেই, তেমনি সুশাসন সেখানে আক্রান্ত, জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র সেখানে পিছু হটছে, তেমন কথা বললে সত্যের কোনো অপলাপ হয় না। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো উন্নয়নের তেজি ঘোড়ার পা জোড়ার পাশাপাশি সুশাসনের শুকনো পা দুখানাকেও সমানতালে চলার ব্যবস্থা করে দেওয়া।

কোন পথে বাংলাদেশ

প্রশ্ন হলো, এই কাজটা কীভাবে হবে, কে করবে? ক্ষমতাভোগীরা সর্বত্র পরিবর্তনের বিপক্ষে। সুবিধাভোগী বলতে কেবল ক্ষমতাসীন দলের কর্তাব্যক্তিদের বোঝায় না। চলতি ব্যবস্থাকে গাভি ভেবে যাঁরা দুধ দুইয়ে চলেন, তাঁদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজভুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থা রয়েছে। তাঁরা কেউ বড় রকমের পরিবর্তনের পক্ষে নন। চলতি ব্যবস্থায় যখন বেশ গায়ে বাতাস লাগিয়ে কাটানো যাচ্ছে, তাহলে সেখানে অকারণে বিপদ ডেকে আনা কেন? তাদের নিম্ন অথবা উচ্চ স্বরে বলা এই যুক্তি পুনঃপুন শোনা যায় সরকার-ঘনিষ্ঠ তথ্যমাধ্যমে। নোয়াম চমস্কির কথা ধার করে বলা যায়, এই ‘করপোরেট মিডিয়া’র একটাই কাজ, কর্তৃত্ববাদের পক্ষে সম্মতি নির্মাণ।

পরিবর্তনের বিপক্ষে একটি অনুচ্চ যুক্তি হলো, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় যদি উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে গণতন্ত্র বা সুশাসন বলে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করা কেন। চীনকে দেখুন, রাষ্ট্রব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদী বলেই না সে এত দ্রুত নিজের দারিদ্র্য কাটিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্লা দিচ্ছে। যুক্তিবাদী পণ্ডিতেরাও যখন জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন, তাতেও দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা বেশি সফল। বিশ্বব্যাংকের জন্য প্রস্তুত এক গবেষণাপত্রে ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা এ যুক্তির সঙ্গে একমত হয়ে বলেছেন, কোনো কোনো পরিস্থিতিতে উদারনৈতিক আইনের শাসন (অর্থাৎ সুশাসন) প্রতিষ্ঠার আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃহত্তর কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। সময় হলে সুশাসনও আসবে। প্রায় একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিস স্পেন্স কর্তৃক গঠিত গ্রোথ কমিশন।

খুব উচ্চ কণ্ঠে না হলেও বাংলাদেশে অনেকে ঠিক এ যুক্তিতে উন্নয়নের রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন, যাঁরা আদর্শগতভাবে উদারনৈতিক ও জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থার পক্ষে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে নিজেদের
নীতিগত অবস্থানের কারণে সুশাসনের বদলে ‘কম ক্ষতিকর’ বিবেচনা করে তাঁরা কর্তৃত্ববাদকেই শ্রেয় বলে রায় দিয়েছেন।

সমস্যা হলো, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় দ্রুত উন্নয়ন অর্জিত হলেও তা টেকসই হয় না। কর্তৃত্ববাদ মানে এক ব্যক্তি বা অতি ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর হাতে সব ক্ষমতা ও সুবিধার সমাহরণ। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যক্তির অধিকার কেবল সীমিতই নয়, সে প্রতিনিয়ত সরকারি নজরদারির অন্তর্গত। আজ অথবা কাল এই ব্যবস্থায় চিড় ধরবেই। উন্নয়নের সুফল লাভে ব্যর্থ অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বাইরে এমন জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায় একসময় না একসময় খেপে উঠবেই। কর্তৃত্ববাদের ভিত্তি প্রায় সর্বত্রই একধরনের বিকৃত জাতীয়তাবাদ, যার কেন্দ্রে থাকে ধর্ম, বর্ণ বা সমরূপ বিভাজন সৃষ্টিকারী রাজনীতি। এই রাজনীতির ফলে শুধু যে নাগরিক শান্তি ও সংহতি ব্যাহত হয় তাই নয়, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাটিও ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ইতিহাসে সে ঘটনার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে।

উন্নয়ন ও সুশাসন একে অপরের পরিপন্থী নয়। বস্তুত সুশাসনের একটা লক্ষ্য উন্নয়নের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেওয়া। সুশাসন মানে প্রশাসনের জবাবদিহি, এই জবাবদিহি অর্জিত হলে দুর্নীতি কমে, হালুয়া-রুটির ভাগাভাগি হ্রাস পায়। ফলে ব্যাহত হওয়ার বদলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হয়। এসব কথা জেনেও না জানার ভান করেন কর্তাব্যক্তিরা। নিচের থেকে চাপ সৃষ্টি না হলে তাঁরা আরামকেদারায় বসে হাওয়া খাওয়া বন্ধ করবেন, তা ভাবার কোনোই কারণ নেই।