এত মানুষ হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে এল কেন?
রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকা। প্রেসক্লাবের সামনে এক সারি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ। পাশের দোকানের সামনে একজন বয়স্ক লোক হা করে তাকিয়ে আছেন। বিড়বিড় করে বলছেন, ‘এত মানুষ হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে এল কেন।’ ঠিক তখনই একজন মা এক হাতে বাচ্চার হাত ধরেছেন, আরেক হাতে ধরা আছে একটি কৃত্রিম ফুলের টব। গলায় ঝুলে আছে একটি ব্যাগ। তিনি রাস্তা পার হতে গিয়ে পারছেন না। দাঁড়ানো মানুষটার কারণে অসুবিধা হচ্ছিল। শেষমেশ লোকটাকে ধাক্কা দিয়েই তিনি পার হয়ে গেলেন।
পড়ে যাওয়ার হাত থেকে কোনোরকমে রক্ষা পেয়ে লোকটা বিড়বিড় করে কী বললেন, ঠিক বোঝা গেল না। তবে এটুকু বোঝা গেল, তিনি বেজায় বিস্মিত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।
রাজশাহীতে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে রাস্তায় এত মানুষ চোখে পড়েনি। নগরের অভিজাত দোকানপাটেও এত ভিড় নেই। শুধু ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে। যে কারণে রাস্তায় রিকশারও জট বেঁধে গেছে। রাস্তা পার হতে গিয়ে ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
নগরের গণকপাড়ার মোড় থেকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত ও রাস্তার ওপর এসব দোকানের সারি বসেছে। একইভাবে শহরের আরডিএ মার্কেটের সামনের রাস্তার দুধারের দোকানগুলো যেন হঠাৎ করেই জেগে উঠেছে। আবার ভুবনমোহন পার্কের সামনের স্যান্ডেল পট্টিও যেন নতুন করে বসেছে। অনেক দিন এসব এলাকায় এত মানুষের ভিড় চোখে পড়েনি।
ভুবনমোহন পার্কের সামনে দিয়ে একজন বাবা ভিড়ের মধ্যে প্রায় দুই বছরের একটি ছেলের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাচ্চাকে কিছু কিনে দেওয়ার জন্য একটি দোকানের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশেই রূপালী ব্যাংকের কেএন শাখার সামনে খানিকটা জায়গা ফাঁকা। সেখানেই এক মা রিকশা থেকে দুই বাচ্চাকে নিয়ে নামলেন। কেনাকাটা করার জন্য দোকানের ভেতরে ঢুকলেন। এত ব্যস্ত মানুষ কারও সঙ্গে কথা বলার যেন কোনো অবসর নেই।
পথশিশুরা স্বাভাবিক অবস্থায় যারা বেলুন বিক্রি করত, এখন তারা মাস্ক নিয়ে বিক্রি করতে বের হয়েছে। ব্যাংকের সামনেই এক শিশুকে মাস্ক গোছাতে দেখা গেল। গুছিয়ে আবার ক্রেতার উদ্দেশে সে হাঁকডাক শুরু করে দিল। কিন্তু তার নিজের মুখেই মাস্ক নেই। নিজের মাস্ক নেই কেন? জানতে চাইলে সে উত্তর দেয়, তার মাস্ক লাগে না। কোথায় থাকে, নাম কী? জিজ্ঞেস করার আগেই সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়।
হঠাৎ এই ভিড়ের কারণ কী? জানতে চাইলে ছোট বাচ্চাদের জামা-গেঞ্জির দোকানি মোশাররফ হোসেন (৪৫) বললেন, এরা সবাই গরিব মানুষ। করোনার কারণে বাচ্চাকে কিছু কিনে দিতে পারেননি। হয়তো ঈদ উপলক্ষে কিছু একটা কিনে না দিলে বাচ্চাকে থামাতে পারছেন না। এই জন্যই এসেছেন। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার সকালেও এমন ভিড় ছিল না।
কথা শেষ না হতেই তাঁর দোকানের সামনে বাচ্চাসহ একজন মাকে পাওয়া গেল। তাঁর নাম মৌসুমী খাতুন (২৮)। তাঁর স্বামী একজন রিকশাচালক। ঈদের আগের দিনে কেন এই ভিড়ের মধ্যে এসেছেন? জানতে চাইলে দোকানি মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে তাঁর কথা মিলে গেল। মৌসুমী বললেন, বাচ্চাকে থামাতে না পেরে বাধ্য হয়ে শেষ সময়ে এসেছেন।