কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চৌকিদহ গ্রামের আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। (ইনসেটে)  মাটি কাটায় এই গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গত বুধবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চৌকিদহ গ্রামের আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। (ইনসেটে) মাটি কাটায় এই গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গত বুধবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

ইট তৈরির জন্য সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা সদরের শ্রীকোলা ও চৌকিদহ এলাকার আটটি জায়গার কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইটভাটা আইনে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা নিষেধ থাকলেও ভাটার মালিকেরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এগুলো কাটছেন।
উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকরাম হোসেন বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় কেটে ভাটায় ব্যবহার করতে পারবেন না। আইন অমান্যকারীদের দুই বছর সাজা এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান আছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে উল্লাপাড়া সদরের শ্রীকোলা ও চৌকিদহ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষা বপন করা হয়েছে। এসব সরিষাখেত থেকে আশপাশের ইটভাটার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে। সরিষাগাছগুলো উপড়ে ফেলে মাটি কেটে ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাক ও ট্রাক্টর এই মাটি পরিবহন করছে। মাটি পরিবহনের জন্য অন্যান্য জমি নষ্ট করে রাস্তা করা হয়েছে। জমিতে পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার ফলে চৌকিদহ এলাকার একটি গভীর নলকূপের পানি সরবরাহের নালাও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি হাজার ঘনফুট মাটি তিন হাজার টাকায় কেনেন ইটভাটার মালিকেরা। এরপর কাটার জন্য দুই হাজার এবং পরিবহনের জন্য আরও দুই হাজার টাকা দিয়ে মাটি ভাটায় নেন তাঁরা।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চৌকিদহ এলাকায় শ্রমিকেরা কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরে ওঠাচ্ছেন। অন্যদিকে শ্রীকোলা এলাকায় এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। দুটি এলাকার প্রায় আটটি জায়গায় সদ্য বপন করা সরিষার জমি থেকে মাটি কেটে স্থানীয় চারটি ভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। চৌকিদহ এলাকার একটি গভীর নলকূপের নালার রাস্তার মাটি কেটে ফেলায় সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জমিতে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই এলাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিলসুন্দর নদ। এই নদীর তলদেশের সমতল করে পাশের খেতের মাটি কাটা হচ্ছে।
চৌকিদহ এলাকায় মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে চালা গ্রামের আবু তালেব বলেন, এই জমিগুলোতে ইরি, বোরো ও সরিষা—তিনটি ফসলের আবাদ হতো। মাটি কাটায় এখন থেকে একটি ফসল আবাদ করা যাবে। তারপরেও জমিগুলো আবাদের উপযোগী করতে দুই বছর সময় লাগবে। ভাটার মালিকেরা দাম বেশি দেওয়ায় জমির মালিকেরা মাটি বিক্রি করছেন। একটি জমি থেকে মাটি কাটার পর গর্ত হওয়ায় পাশের জমির মালিকও বাধ্য হয়ে মাটি দিচ্ছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বি টি এস ইটভাটার ব্যবস্থাপক এবং এর আংশিক স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, এই এলাকা থেকে আগেই মাটি কেটে বাইরে বিক্রি করেছেন জমির মালিকেরা। তাঁরা এ বছরই মাটি কাটা শুরু করেছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তাঁরা মাটি কাটছেন।
জমির মালিকদের মধ্যে শ্রীকোলা গ্রামের শামসুল আলম বলেন, ভাটার মালিক আত্মীয় হওয়ায় এবং ভালো টাকা দেওয়ায় মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছেন। মাটি কাটা নিষেধ সম্পর্কে আইন আছে কি না, তা তিনি জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব কুমার সরকার বলেন, মৌখিক অভিযোগ পাওয়ায় ওই এলাকার ইটভাটার মালিক ও জমির মালিকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কার্যালয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মৌখিকভাবে মাটিকাটা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আলোচনা করে স্থায়ীভাবে মাটি কাটা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।