আদালতের সঙ্গে প্রতারণা ও তথ্য গোপন করে উচ্চ আদালত থেকে রুলসহ নিষেধাজ্ঞা নেওয়া এফএমসি ওটু লিমিটেড নামের কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্টদের এক কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর এক কোটি টাকার পে-অর্ডার জমা দেয় আবেদনকারী পক্ষ। এই তথ্য জানানোর পর মামলা না চালানোর দিক বিবেচনায় আজ মঙ্গলবার এফএমসি ওটু লিমিটেডের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা না মেনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আদেশ নেওয়ায় কোটি টাকা জরিমানার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এটি বিচারব্যবস্থায় একটি মাইলফলক। এ অবস্থায় অন্যরা প্রতারণার আশ্রয় নিতে গেলে তিনবার চিন্তা করবে। বাদী (এফএমসি ওটু লিমিটেড) ওই টাকা জমা দিয়েছে। আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে টাকা জমা দেওয়ার তথ্য হলফনামা করে দাখিলের পর তাদের মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ঘটনার পূর্বাপর
নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্টে নাম থাকার প্রেক্ষাপটে এফএমসি ওটু লিমিটেড নামের কোম্পানি, তার সহযোগী ছয় প্রতিষ্ঠান, পরিচালকসহ ১৫ ব্যক্তি হাইকোর্টে ২০১৭ সালে আবেদন (সিভিল রিভিশন) করেন। এতে বলা হয়, অবকাশ থাকায় দেওয়ানি আদালতে (নিম্ন আদালত) তাঁরা নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করতে পারছেন না। তখন এফএমসি ওটু লিমিটেডসহ আবেদনকারী পক্ষ জানান, ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ (পঞ্চম) আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করবেন। ২০১৮ সালের ৭ মে হাইকোর্ট রুল দিয়ে খেলাপি হিসেবে সিআইবি রিপোর্ট আবেদনকারীদের নাম প্রকাশে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। চূড়ান্ত শুনানির জন্য দিন ধার্য হলে আবেদনকারী পক্ষ মামলাটি না চালানোর কথা জানিয়ে রুল খারিজের আরজি জানায়। এরপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৩ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, দেখা যাচ্ছে যে সিআইবি বিষয় নিয়ে আবেদনকারীরা কোনো মামলা (নিম্ন আদালতে) না করে চার বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার সুবিধা ভোগ করছে। যা আদালতের প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল। ফলে রুল খারিজ করে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হলো। ৩০ দিনের মধ্যে এই অর্থ রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর জমা দিতে বলা হলো। নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এফএমসি ওটু লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ৮ মার্চ আবেদন করেন। আবেদনটি চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. ওয়াজি উল্লাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, এক কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে এফএমসি ওটু লিমিটেড আপিল বিভাগ আবেদন করেন। এই আবেদন না চালানোর কথা বলেন তাদের আইনজীবী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, না চালানোর কারণে আবেদন খারিজ করে দেওয়া হলে, তারা ওই টাকা দেবে না। তখন আপিল বিভাগ আগে টাকা জমা দিয়ে আসতে বললেন। পে-অর্ডারের মাধ্যমে কোটি টাকার চেক জমা দেওয়ার তথ্য জানানোর পর আপিল বিভাগ বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী মো. ওয়াজি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে এক কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এক কোটি টাকা পরিশোধ করার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে আবেদনটি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। আবেদন না চালানোর দিক বিবেচনায় আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে পরিচালক কাজী মো. মোরশেদুল আলম ওই টাকা দিয়েছেন।