ক্ষতির মুখে হিমাগারের মালিক ও ব্যবসায়ীরা

১৮-দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহনব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বাজারে প্রতি বস্তা আলুর দাম গড়ে ৮০০ টাকা কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা আলু বের না করায় উপজেলার ১২টি হিমাগারে প্রায় দুই লাখ বস্তা আলু পড়ে আছে। বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও তাঁরা আলু বের করছেন না।
বিপুল পরিমাণ লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা যদি হিমাগার থেকে আলু বের না করেন, ভাড়া ও ঋণ বাবদ হিমাগারের মালিকদের ক্ষতি হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। আর আলু বের না করলেও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
হিমাগার কর্তৃপক্ষ ও আলু ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের আলু উৎপাদনে এ উপজেলা প্রধান হওয়ায় এখানে সর্বোচ্চ ১২টি হিমাগার গড়ে উঠেছে। এসব হিমাগারে এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ীরা এবার ১৫ লাখ ৫০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেন। প্রতি বস্তায় ৮৪ কেজি করে আলু। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে এবারও হিমাগারের মালিকেরা গ্রানুলা আলু রাখতে প্রতি বস্তায় গড়ে ৩৭৫ টাকা ও দেশি পাকড়ি জাতের আলু রাখতে গড়ে ৪৫০ টাকা করে ঋণ দিয়েছেন। আলু বিক্রি করে সুদসহ ঋণ পরিশোধের কথা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এবার আলুর দাম ওঠা-নামা করে এগোচ্ছিল। কিন্তু টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ায় আলুর বাজারে নজিরবিহীন ধস নামে।
গতকাল বুধবার শিবগঞ্জে এক বস্তা গ্রানুলা জাতের আলু ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং পাকড়ি জাতের আলু ৭০০ থেকে ৮০০ দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ গ্রানুলা আলু সংরক্ষণে প্রতি বস্তায় ৬৩৫ টাকা ও পাকড়ি জাতের জন্য এক হাজার ২৩০ টাকা খরচ হয়েছে।
কয়েকজন আলু ব্যবসায়ী জানান, বিপুল পরিমাণ লোকসানের আশঙ্কায় তাঁদের বেশির ভাগই হিমাগারেই আলু ফেলে রাখবেন। তবু প্রতি বস্তা গ্রানুলা আলুতে তাঁদের ২৬০ টাকা ও পাকড়িতে ৭৮০ টাকা লোকসান হবে। এতে সব মিলিয়ে তাঁদের প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হবে।
উপজেলার আটমূল গ্রামের ব্যবসায়ী আবু রায়হান (৪৭) বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে হামাকেরে একন মরণদশা। তবিল হ্যারা অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়্যা গেনু। আগামী দিনে হামাকেরে কী হবি বুঝবার পারিচ্চি ন্যা।’
হিমাগারের মালিকেরা জানান, ৩৫০ টাকা করে দুই লাখ বস্তা আলুর ভাড়া দাঁড়ায় সাত কোটি টাকা। প্রতি বস্তায় গড়ে ৪০০ টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলু বের না করলে লোকসান হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।