গত ১৬ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখা থেকে ‘সংবিধানসম্মত শব্দচয়ন ও তথাকথিত আদিবাসী দাবির কর্মসূচি পালনে স্থান নির্বাচন প্রসঙ্গে’ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সংগঠনটি এ নির্দেশনাকে ‘উদ্ভট, অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করে অচিরেই ওই নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমার নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামানের সই করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশি-বিদেশিদের সহায়তায় বাংলাদেশে আদিবাসী নামক অসাংবিধানিক দাবিটি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই অপকৌশল ও ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক শহরকেন্দ্রিক বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/অবকাঠামো যেমন: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসহ আরও অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর্মসূচি পালনের জন্য ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাগণকে সম্পৃক্ত করার প্রবণতাও লক্ষণীয়।’
জনসংহতি সমিতি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে কোথাও বলা নেই যে কেবল সংবিধানসম্মত শব্দচয়ন করতে হবে বা সংবিধানে উল্লেখ নেই এমন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি সংবিধানে স্বীকৃত নয় এমন কোনো দাবিদাওয়া উত্থাপন বা বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচি নেওয়া যাবে না বলে সংবিধানের কোথাও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ শব্দগুলো উল্লেখ করা হলেও সংবিধানে কোথাও বলা নেই যে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। বরং দেশের বিভিন্ন আইনে ও সরকারি পরিপত্রে ‘উপজাতি’ শব্দের পাশাপাশি ‘আদিবাসী’ শব্দটিরও ব্যবহার রয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে, সংবিধানে ‘দলিত’, ‘সংখ্যালঘু’, ‘প্রতিবন্ধী’ ইত্যাদি অনেক শব্দের উল্লেখ না থাকলেও এসব শব্দ নানাভাবে বিভিন্ন আলোচনায় ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এসব মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসহ আরও অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
জনসংহতি সমিতি মনে করে, ‘আদিবাসী’ শব্দ নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা জারির পেছনে অত্যন্ত বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে।—বিজ্ঞপ্তি।