গাইবান্ধায় প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে লুটপাটের অভিযোগ

সরকারের শেষ সময়ে গাইবান্ধার পাঁচ সাংসদের নামে বরাদ্দ করা বিশেষ টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের কাজের বরাদ্দ নিয়ে লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প দুটির আওতায় গত দেড় মাসে ছয় হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এসব প্রকল্পের বিপরীতে দেখানো হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রকল্প। তবে যাঁদের প্রকল্প সভাপতি করা হয়েছে, তাঁরাই জানেন না তাঁদের নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাংসদ আবদুল কাদের খান, গাইবান্ধা-২ (সদর)-এর মাহাবুব আরা বেগম, গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ি) আসনের টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের মনোয়ার চৌধুরী ও গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়ার নামে ওই বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই পাঁচ সাংসদের প্রত্যেকের জন্য টিআরের ৬০০ ও কাবিখার ৬০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গাইবান্ধা নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক মির্জা হাসান অভিযোগ করেন, সামনে নির্বাচন। তাই সরকারের শেষ সময়ে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মানেই নির্বাচনী লুটপাট।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর টিআর প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধার ওই পাঁচটি নির্বাচনী এলাকায় দুই দফায় তিন হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার শেষ সময় ছিল গত ১৫ নভেম্বর। কিন্তু বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ হয়নি। এ ছাড়া ১৩ নভেম্বর কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ওই পাঁচটি নির্বাচনী এলাকায় তিন হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাংসদেরা তাঁদের সমর্থকদের নামে কাবিখা প্রকল্পের তালিকাও তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দাখিল করেছেন। চাল ছাড় করতে প্রকল্প সভাপতিদের পত্র (ডিও লেটার) দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রকল্পের কাজ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।
সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৫টি টিআর প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি।
টিআর প্রকল্পের আওতায় ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজ সংস্কারের জন্য চার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০ নভেম্বর ওই কলেজে গিয়ে কাজের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কলেজ কমিটির সদস্য সেলিম পারভেজ অভিযোগ করেন, কমিটির সভাপতি সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়ার লোকজনই কলেজের নামে প্রকল্প দেখিয়ে চাল আত্মসাৎ করেছেন। প্রকল্প সভাপতি সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমাকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হলেও আমি জানি না।’ তবে মুঠোফোনে সাংসদ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আমার সমর্থকদের নামে প্রকল্প দেওয়ার অভিযোগ অবাস্তব। প্রকল্প দিয়েছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। কাজ হয়েছে কি না তা দেখার দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও)।’
টিআরের আওতায় গোবিন্দগঞ্জের নাকাই ইউনিয়নের মধ্যপাড়া কবরস্থান সংস্কারে এক মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর মধ্যপাড়া গ্রামে গিয়ে কবরস্থান দেখা যায়নি। কাগজ-কলমে এ প্রকল্পের সভাপতি আল-আমিন। কিন্তু এলাকায় ওই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। নাকাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদুল আমিন জানান, সাংসদের লোকজনই ভুয়া নাম দিয়ে প্রকল্প দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘আমার কোনো সমর্থক কিংবা দলীয় ব্যক্তিকে প্রকল্প দিইনি।’
টিআর প্রকল্পে পলাশবাড়ির কাজির বাজার গ্রামে মফেজের বাড়ির মসজিদ সংস্কারের জন্য দুই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মসজিদ কমিটির সভাপতি মাহফুজার রহমান জানান, চাল বরাদ্দের কথা তাঁর জানা নেই। তবে প্রকল্প সভাপতি মফেজ উদ্দিন দাবি করেন, আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। স্থানীয় সাংসদ টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী বলেন, ‘লুটপাটের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা এলাকার উন্নয়নে প্রকল্প দিই। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পিআইও কার্যালয়ের।’
সাংসদ আবদুল কাদের খান দাবি করেন, ‘আমার প্রকল্পের কাজ ভালোভাবে হচ্ছে। আমি দলের কাউকে কাজ দিইনি।’ মাহাবুব আরা বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহ আলম প্রথম আলোকে জানান, সাংসদদের নামে বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প তালিকা সাংসদ ও তাঁদের লোকজনই করে থাকেন। এসব কাজে অনিয়মের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেন না। এর পরও নিয়মিত প্রকল্পগুলো দেখা হচ্ছে।