ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই পুঁজি খোয়ালেন তাঁরা

তাৎক্ষণিকভাবে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যায়নি
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে সবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন রাজধানীর নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সেখানে আগুন লেগে পুড়ে গেছে ৫০টির মতো দোকান। এতে ব্যবসার পুঁজিই হারিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।

মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটার দিকে নীলক্ষেতের বই বাজারে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে ব্যবসায়ীরা বই টেনে বের করার সময়ও বইয়ের ভেতরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

কীভাবে এই আগুন লেগেছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। রাকিব হোসেন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেন, একটি দোকানে শাটারমিস্ত্রি কাজ করছিলেন। সেখান থেকে প্রথমে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। এ সময় একজন দোকানি চিৎকার করে ওই দোকানের বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু চোখের পলকে দোকানে আগুন ধরে যায়।

আরও পড়ুন

নীলক্ষেতের বইয়ের বাজারে উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার বই, বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা গল্প–উপন্যাসের বই, ফটোকপির দোকান ও তেহারির দোকান রয়েছে। আগুন লাগে নিউমার্কেটের দিকে বাজারের অংশে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মার্কেটের দোতলায় একটি দোকানে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। কতগুলো দোকান পুড়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৫ থেকে ৪০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

এই বাজারে ‘নিউ বুক গার্ডেন’ নামের একটি দোকান রয়েছে মো. জহিরের। ১৯৭৪ সালে জহিরের বাবা দোকানটি চালু করেছিলেন। এখন জহির ও তাঁর ভাই দুটি দোকান চালাচ্ছেন নীলক্ষেতে। গতকাল রাতে জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘সব শেষ। স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল, বইয়ের কেনাবেচা ছিল না। ইদানীং টুকটাক বিক্রি হচ্ছিল, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ ঘটনার বিবরণ দিয়ে এই দোকানি বলেন, ‌‘আগুনটা ছড়াইতে পাঁচ মিনিটও লাগে নাই। আমি শুধু শুনছি যে আগুন লাগছে, শুধু নিজে বাইর হইয়া আসতে পারছি। হাতে কইরা কিচ্ছু আনার টাইম পাই নাই।’

পুড়ে যাওয়া বইয়ের স্তূপের ওপর হতাশ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তপন বুক স্টোরের তরিকুল ইসলাম ওরফে তপন। তিনি বলছিলেন, অল্প কদিন আগে ১২ লাখ টাকার বই তুলেছেন। একটা বইও বের করে আনতে পারেননি। কাছেই সড়ক বিভাজকের ওপর মো. ফিরোজ নামের একজন তরুণ বই ব্যবসায়ীকে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। তিনি গোটা তিরিশেক বই রক্ষা করতে পেরেছেন।

আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু উৎসুক জনতার চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। ঘটনাস্থলে র‌্যাব-পুলিশের উপস্থিতিও কাজে আসছিল না। তবে স্বেচ্ছাসেবীরা বরাবরের মতোই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগুন নেভানোয় কাজ করেছেন।