চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার তারাবিহর নামাজের পরে এক কিশোরী নয়া মির্জা খালের পাড়ে দেওয়া প্রতিরোধদেয়ালের ওপর দিয়ে হাঁটছিল। এ সময় হঠাৎ খালে পড়ে যায়। তবে তার আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
মোবারক আলী জানান, কিশোরীর নাম জানা যায়নি। তবে তার বয়স ১৩-১৪ হবে। সে চান মিয়া সড়ক এলাকার একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকে।
এর আগে ১৫ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওয়ের বালুরটাল এলাকার একটি খালে পড়ে যাওয়া এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেওয়ার পর এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ফায়ার সার্ভিসের কালুরঘাট স্টেশন।
চট্টগ্রাম নগরের উন্মুক্ত নালা ও খালগুলো রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখানে পড়ে একের পর এক মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে। গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে শিশুসহ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজনের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। এত মৃত্যু ও দুর্ঘটনার পরেও নগরের খাল ও নালা-নর্দমাগুলো ঝুঁকিমুক্ত হয়নি।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর নগরের ষোলশহর এলাকায় চশমা খালে তলিয়ে যায় শিশু মো. কামাল উদ্দিন (১২)। তিন দিন পর নগরের মির্জা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
এর আগে ৩০ জুন নগরের মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুরে চশমা খালে পা পিছলে পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। এখনো তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদের মাজারগেট এলাকায় ফুটপাত থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার (১৯)।
এ ছাড়া গত ২৬ মার্চ নালায় পড়ে যায় এক শিশু। ওই দিন বিকেলে নগরের পুরোনো চান্দগাঁওয়ের পাঠানিয়া গোদা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ফুটপাত দিয়ে দুই নারী হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা এক শিশুও হাঁটছিল। হাঁটার একপর্যায়ে সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিকসের সামনের ফুটপাতে থাকা গর্তে পড়ে যায় শিশুটি। এ সময় দুই নারী কোনোরকমে তাঁকে তোলেন।
একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএ—কেউ এর দায় নিচ্ছে না। এসব মৃত্যুর জন্য উল্টো পরস্পরকে দায়ী করে আসছে দুটি সংস্থা।
কিন্তু সংস্থা দুটির ভূমিকায় চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন মৃত্যুর জন্য দুটি সংস্থার গাফিলতিকে দায়ী করা হয়।