গ্যাস–সংকটের কারণে মাটির চুলায় রান্না করছেন মিরপুর–১১ নম্বরের দুই বাসিন্দা।
গ্যাস–সংকটের কারণে মাটির চুলায় রান্না করছেন মিরপুর–১১ নম্বরের দুই বাসিন্দা।

মিরপুর ৬ নম্বরের ফারহানা ইয়াসমিন দুপুর ১২টার দিকে রান্নাঘরে ঢোকেন। ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যে রান্না শেষ করে মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে। কিন্তু চাল ধুয়ে চুলায় দিতেই টের পান, গ্যাসের যে চাপ, তাতে রান্না করতে অনেক সময় লাগবে। পরে তিনি রান্না বন্ধ রেখে মেয়েকে নিয়ে বাইরে খাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

ফারহানা ইয়াসমিনের তুলনায় মিরপুর ১২ নম্বরের আঞ্জুমান আরার বাসার অবস্থা আরও শোচনীয়। ছয় মাস ধরে দুপুরে রান্না বন্ধ। রাত ১২টার দিকে গ্যাস এলে তিনি রান্না করে রাখেন। সারা দিন সেই খাবার ওভেনে গরম করে খান। আর কোনো রাতে রান্না করতে ইচ্ছা না করলে হোটেলে খাবার খেয়ে কাটাতে হয়।

গতকাল বুধবার মিরপুর ৬ নম্বর, ১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার কিছু অংশে গ্যাসের চাপ কম ছিল। ফলে এসব এলাকায় রান্না করতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কেবল চাল ফুটতেই দেড় ঘণ্টার বেশি লেগেছে বলে জানান কাজীপাড়ার সালেহা বেগম।

তবে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ব্লক এ, ই, সি, ১২ নম্বর সেকশনের ব্লক ডি, সি, ১৩ নম্বরের সি ব্লকে দিনে গ্যাস থাকে না ছয় মাসের বেশি সময় ধরে। গতকালও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এ এলাকার বাসিন্দারা জানান, মিরপুরে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের সংকট। তবে গত ডিসেম্বর থেকে সে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আগে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাস থাকলেও দিন দশেক ধরে রাত ১২টার আগে গ্যাস আসে না। আবার সকাল ছয়টার আগেই চলে যায়।

মিরপুর ১১ নম্বর সি ব্লকের বাসিন্দা ঝরনা বেগম বলেন, ‘দিনে রান্না করা যায় না। মধ্যরাতে উঠে রান্না করতে হয়। রাত জেগে রান্না করতে করতে চোখে কালি পড়ে গেছে। পানি ফোটাতে পারি না। কিনে পানি খেতে হয়। আরেক গৃহিণীর অভিযোগ, গ্যাসের সমস্যায় খাবার তৈরি নিয়ে তাঁরা বেশ ভোগান্তিতে আছেন। সন্তানদের টিফিন দিতে পারেন না। ঠান্ডা খাবার খেতে হয়। হোটেলে গিয়ে খেতে গিয়ে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। বাসায় অতিথি এলে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এর পাশাপাশি গ্যাসের সমস্যা নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের মধ্যে মনোমালিন্য, কথা-কাটাকাটি হয়। এমনকি পারিবারিক কলহের ঘটনাও ঘটে।

গতকাল বুধবার দুপুরে ১১ নম্বর সেকশনের ই ব্লকে দেখা যায়, অনেক বাড়ির সিঁড়ির নিচে বা খালি অংশে মাটি বা টিন দিয়ে বানানো চুলায় রান্না হচ্ছে। এ রকম এক বাড়ির খালি অংশে রান্না করছেন ভাড়াটে রুপা আক্তার ও লাইলি বেগম। রুপা বলেন, ‘গ্যাসের বিল দিই নিয়মিত। কিন্তু রান্না করতে হয় মাটির চুলায়। রান্নার জন্য সিরিয়াল ধরতে হয়। একটু বেশি সময় নিলেই অন্য ভাড়াটেরা চিল্লাচিল্লি করেন। এ বাড়িতে মালিকসহ নয়টি পরিবারের বাস। তাঁরা তিন চুলায় রান্না করেন। অতিথি এলে হোটেলে খেতে নিয়ে যেতে হয়।’

এ বাড়ির মালিক রাহিমা বেগম বলেন, গ্যাসের সমস্যা থাকায় ভাড়াটেরা থাকতে চান না। অনেকে কয়েক মাস থেকেই চলে যান। গৃহকর্মী কাজ করতে চান না। আবার মাঝেমধ্যেই রান্নাবাড়া নিয়ে ভাড়াটেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি চলে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) আরমানুর রেজা বলেন, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এ সমস্যা বাড়ছে। ঢাকার চারপাশে কলকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি এর মূল কারণ। এর পাশাপাশি ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের প্রধান পয়েন্ট ডেমরা থেকে মিরপুরের দূরত্বের কারণেও এখানে গ্যাসের সরবরাহ অন্য এলাকার তুলনায় কম থাকে। সমস্যা কত দিনে সমাধান হতে পারে, জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।