চিকিৎসাসেবায় সমস্যা বহুমাত্রিক

চিকিৎসাসেবা নিয়ে রোগী ও চিকিৎসকের বক্তব্য প্রায় বিপরীতধর্মী। দূরত্ব কমাতে আলোচনা দরকার।

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় জোনাইল ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ১৩ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসায় অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছে। এর এক দিন আগে নেত্রকোনার মদন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার চারটি ডোজ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তারও আগে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামের একটি ক্লিনিকে অক্সিজেনের নল খুলে নেওয়ায় শিশুর মৃত্যু হয়।

সারা দেশের সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রে এমন ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অব্যবস্থাপনা বা অবহেলার কথা উঠলে অভিযোগের আঙুল প্রথমেই ওঠে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। কিছু ক্ষেত্রে নার্স, ওয়ার্ড বয় বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।

সমস্যাটি পুরোনো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত বিক্ষিপ্ত–বিচ্ছিন্ন সংবাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। ঘটনা ঘটলে মারামারি, ভাঙচুর, থানা–পুলিশ, মামলা, বদলি—এসবের মাধ্যমেই সমাধানের চেষ্টা চলে। সমাধান হয় না। সমস্যাটি দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। পৃথক তিনটি গবেষণায় পরিস্থিতি বোঝার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্ত পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য বা চিকিৎসাবিষয়ক পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বলছেন, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় জনবলের স্বল্পতাসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর অত্যন্ত চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়, সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করা তাদের জন্য কঠিন। বাস্তবতা এই যে চিকিৎসকেরা অনেক ক্ষেত্রে উপায়হীন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নিজের পরিবারের কোনো সদস্যের বন্ধ্যাত্বের সমাধান করতে পারছেন না, উদীয়মান ক্যানসার বিশেষজ্ঞ নিজের বাবার ক্যানসারের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেছেন না, নারী সংবেদনশীল পরিবেশ না হওয়ায় প্রতিশ্রুতিশীল নারী চিকিৎসক মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছেন না। অথচ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ তোলেন তাঁদের চিন্তায় এ ধরনের বিষয় স্থান পায় না।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে পানি বা বিদ্যুৎ না থাকলে, খাবারের মান খারাপ হলে মানুষ চড়াও হয় চিকিৎসকের ওপর। হাসপাতালে ওষুধ না থাকলে, হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন থাকলেও তার দায়ভার চাপানো হয় চিকিৎসকদের ওপর। চিকিৎসার সঙ্গে বহু ধরনের মানুষ ও পক্ষ জড়িত। কিন্তু এর সব দায়ভার চাপানো হয় চিকিৎসকদের ওপর।

চিকিৎসক–রোগী সম্পর্ক

স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে নীতি আলোচনার সূত্রপাতের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা করেন। প্রকাশনা সংস্থা উইলি গত বছর ৩১ আগস্ট গবেষণা প্রবন্ধটি হেলথ সায়েন্স রিপোর্টস-এ প্রকাশ করে।

গবেষকেরা বলছেন, রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ক চিকিৎসা ফলাফল বা ট্রিটমেন্ট আউটকাম নির্ধারণ করে দেয়। রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকের দেওয়া তথ্য রোগী কতটা মূল্য ও অগ্রাধিকার দেয়, তা চিকিৎসার সিদ্ধান্তের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। সঠিক রোগনির্ণয়, কার্যকর চিকিৎসা এবং চিকিৎসার ফলাফল নির্ভর করে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্কের গভীরতার ওপর।

ঢাকা শহরের ১০০ রোগীর মতামত ও ধারণা সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। রোগীদের ৫২ জন দুটি বড় সরকারি হাসপাতালে, ২৯ জন চারটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৯ জন একটি অলাভজনক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সাতটি বড় সরকারি হাসপাতালের ৬২ জন চিকিৎসকের সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন গবেষকেরা।

চিকিৎসায় আন্তরিকতা, পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, মানসিক সহায়তা, মন দিয়ে রোগীর কথা শোনা, চিকিৎসা বিষয়ে রোগীর সন্তুষ্টি, রোগ সম্পর্কে পরিষ্কার করে বলা, ব্যবস্থাপত্র স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা, সামাজিক অবস্থানের কারণে বৈষম্য না করা এবং চিকিৎসকের ওপর আস্থা—৯টি সূচকে মতামত নেওয়া হয়। গড়ে ৬৭ শতাংশ রোগী নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন এবং ৩৩ শতাংশ রোগী চিকিৎসকদের বিষয়ে ইতিবাচক। প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী বলেছেন, চিকিৎসকেরা যথেষ্ট সময় দেন না, সামাজিক অবস্থান বুঝে রোগীর সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্যবস্থাপত্র স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন না। ৬০ শতাংশ রোগী চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না এবং তাঁদের কোনো আস্থা নেই চিকিৎসকের ওপর।

অন্যদিকে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসক মনে করেন, অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটলে তাঁদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৭১ শতাংশ চিকিৎসক বলেছেন, রোগী বা তাঁদের স্বজন চিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতার মনোভাব দেখান না।

প্রধান গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্পর্ক অবনতির সবচেয়ে বড় জায়গা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। সুতরাং জরুরি বিভাগ ঢেলে সাজাতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে রোগনির্ণয় ব্যবস্থার পরিসর বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবল বাড়াতে হবে যেন চিকিৎসকেরা রোগীর জন্য বেশি সময় দিতে পারেন।

৬১% সহিংসতা রাতে

কর্মক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সহিংসতার ঘটনাগুলো রাতে বেশি ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ১৫৭টি ঘটনা পর্যালোচনায় এই তথ্য পেয়েছেন গবেষকেরা।

যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার্স ইন ফিজিওলোজি গত ৩ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ে এই গবেষণা ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের আটজন গবেষক প্রবন্ধটি লিখেছেন।

গবেষকেরা প্রবন্ধের শুরুতে বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশেও এই সমস্যা আছে। বাংলাদেশে হাসপাতালে ঘটা সহিংস ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করাই গবেষণার উদ্দেশ্য।

গবেষকেরা তথ্যের উৎস হিসেবে ‘প্ল্যাটফর্মে’ প্রকাশিত ১৫৭টি ঘটনাকে বেছে নিয়েছেন। প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মঞ্চ। প্ল্যাটফর্মে চিকিৎসকেরা ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন বা সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন, সেগুলোই গবেষকেরা পর্যালোচনা করেছেন।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জেলা হাসপাতাল বা বিশেষায়িত ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ে সহিংসতা বেশি ঘটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। মোটাদাগে এর কারণ হয়তো এই যে, রোগীর চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণের মতো জনবল ও সম্পদের ঘাটতি আছে সেবাকেন্দ্রে।

সহিংসতার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা। তার মধ্যে আছে: রোগীর প্রেক্ষাপট, বিলম্বে চিকিৎসা, পেশিশক্তির চর্চা, মৃত্যু ঘোষণা, তীব্র সহিংসতা এবং সেবা গ্রহণের সংস্কৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয় বিলম্বে চিকিৎসা দেওয়াকে কেন্দ্র করে। ২৭ শতাংশ সহিংসতা হয় এই কারণে। এর পরে আছে পেশিশক্তির চর্চা। ২৬ শতাংশ সহিংসতা হয় এ কারণে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে ৮ থেকে ৩৮ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হন। সহিংসতার ধরনের মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, কটু বাক্য বা অশোভন শব্দ ব্যবহার, যৌন হয়রানি অন্যতম।

১৫৭টি সহিংসতার শিকার যাঁরা হয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, ডেন্টাল সার্জন, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, অনারারি মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্ন ডক্টর, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার, কনসালট্যান্ট, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হয়েছেন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসাররা।

১৫৭টি ঘটনায় মোট ১৬৫ জন চিকিৎসক আহত হন। তাঁদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ পুরুষ চিকিৎসক, ১৪ শতাংশ নারী চিকিৎসক। ৬১ শতাংশ ঘটনা ঘটে রাতে, ২৭ শতাংশ সন্ধ্যায় এবং সকালে ১৩ শতাংশ।

১৫৭টি ঘটনার মধ্যে ৮৭টি ঘটনা ঘটেছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। গবেষকেরা বলছেন, প্রাথমিক সেবাকেন্দ্রে সংহিস ঘটনা চীনেও বেশি হতে দেখা যায়। বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে প্রাথমিক সেবাকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দ্বিতীয় স্তরে আছে জেলা হাসপাতাল। এই স্তরে সহিংস ঘটনা ঘটেছে ২৮টি। বিশেষায়িত ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে তৃতীয় স্তরের প্রতিষ্ঠান বলা হয়। এই তৃতীয় স্তরে ঘটনা ঘটেছে ৪২টি।

উপজেলায় ৪৮% চিকিৎসক–নার্স সহিংসতার শিকার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চারজন শিক্ষক এক সমীক্ষায় দেখেছেন, কর্মক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ চিকিৎসক ও নার্স সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনা বেশি ঘটে। তবে সব ঘটনা প্রকাশ পায় না। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে এই সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

উপস্থাপনায় গবেষকেরা বলেছিলেন, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টি প্রশাসন বা নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। দেশে এ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি আছে। বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার হার অনেক বেশি।

উপস্থাপনায় বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে ৬২ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী সহিংস ঘটনার শিকার হন। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এই হার ৭৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও নেপালে যথাক্রমে ৭৬ ও ৬৫ শতাংশ। ভুটানে ৫৭ শতাংশ।

বিএসএমএমইউয়ের গবেষকেরা দেশের ১৬টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ৩৭৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে ১৯৮ চিকিৎসক ও ১৭৯ জন নার্স। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সমীক্ষায় সহিংস ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক চাপ অনেক বেশি পড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর। মারধর বা শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সহিংসতার শিকার হওয়া চিকিৎসক ও নার্সরা ঘটনার পর অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেন না।

গবেষকেরা বলেছিলেন, ১৬টি উপজেলায় পাওয়া এই তথ্য সমস্যার একটি অংশমাত্র, ঠিক পানিতে থাকা বিরাট বরফখণ্ডের চূড়ার মতো। এসব ঘটনা কেন ঘটছে, তা অনুসন্ধান করা এবং সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. টিটো মিয়া বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতিতে চিকিৎসকেরা বৈষম্যের শিকার। মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে একই পদে থেকে অবসরজীবনে যাওয়ার নজির আছে। অনেকেই তা জানেন। তবে এই বৈষম্য দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

মো. টিটো মিয়াসহ ঢাকা মেডিকেলের একাধিক অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেছেন, এই বিষয় নিয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে কাজ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের একজন চিকিৎসক নেতা জানিয়েছেন খুব শিগগির তাঁরা একটি উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করবেন।

বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা, জনবল স্বল্পতা, কাজের চাপ, চিকিৎসক–রোগী সম্পর্কের ক্রমাবনতি, চিকিৎসায় অসন্তুষ্টি, অনাস্থা—এই সমস্যাগুলো পুরোনো। সমস্যা নিয়ে বিক্ষিপ্ত–বিচ্ছিন্ন আলোচনা হলেও কার্যকর কোনো সমাধান হতে দেখা যায়নি। সময় গড়িয়েছে, সমস্যা গভীরতর হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক বা নার্সদের পেশাজীবী সংগঠন, নাগরিক সমাজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অথবা কে বা কারা এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে?

তিনটি গবেষনায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি কিছু সুপারিশ আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার নজির আছে। বিএমএর মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সমস্যাগুলো বহুমাত্রিক, এর সঙ্গে বহু পক্ষ জড়িত। এককভাবে কাউকে দোষ দিয়ে সেবার মান উন্নত করা যাবে না। চিকিৎসকসহ অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন, জনস্বাস্থ্যবিদ, নাগরিক সমাজ একত্রে বসে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এখনই তার উপযুক্ত সময়।’