চিকিৎসায় ভালো থাকেন ‘৭০% মৃগীরোগী’

মৃগীরোগের সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় চিকিৎসা নির্দেশিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীছবি: সংগৃহীত

দেশে প্রতি হাজারে ৮ জনের বেশি মানুষ মৃগীরোগ নিয়ে জীবনযাপন করছেন। মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৬৫ শতাংশই সঠিক চিকিৎসা পান না। তবে যথাযথ ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে এ রোগ নিয়েও ৭০ শতাংশ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। আজ বুধবার মৃগীরোগের সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় চিকিৎসা নির্দেশিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে সোসাইটি অব নিউরোলজিস্টস অব বাংলাদেশ (এসএনবি) এবং তাদের বৈজ্ঞানিক অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সানোফি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মৃগীরোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার চিকিৎসকের কাছে না এসে ঝাড়ফুঁক, তাবিজ–কবজে রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। মৃগীরোগের আধুনিক চিকিৎসা–সুবিধা বাড়াতে দেশে একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার আহ্বান জানান বক্তারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জন্মগত কারণে মায়ের গর্ভধারণের সময় মা–বাবার পুষ্টির অভাবে মৃগী রোগ হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় আঘাত পেলে কিংবা প্রসবের সময় মায়ের অক্সিজেনের অভাব থেকে মৃগীরোগ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শুধু চিকিৎসা নয়, জীবনভর যথাযথ ব্যবস্থাপনায় জীবন চালানোর জন্য সহযোগিতা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তাতে গুরুত্ব আরোপ করবে সরকার।

এসএনবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, মৃগীরোগ মস্তিষ্কের কোষে প্রভাব ফেলে। বিশ্বজুড়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মৃগী রোগ নিয়ে জীবনযাপন করছেন। মৃগীরোগে আক্রান্ত হলে কোথাও যাওয়া যাবে না, ঘরবন্দী থাকতে হবে বলে মনে করেন অনেকে। শহরের চেয়ে গ্রামে মৃগীরোগে আক্রান্তের হার কিছুটা বেশি। পুরুষের ক্ষেত্রে আক্রান্তের হার প্রতি হাজারে ৯ জনের বেশি এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রায় ৮ জন। শিশু ও বয়স্করাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ মৃগীরোগী ভালো থাকেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম তাঁর ৩৬ বছর বয়সী ছেলে নাসিফের অটিজম ও মৃগীরোগ নিয়ে জীবন চালিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রসবের সময় তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় ছেলের এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। মৃগীরোগ যখন–তখন আঘাত হানে। তাঁর ছেলে হরহামেশাই খিঁচুনিতে আক্রন্ত হয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পান, রক্তাক্ত হন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, মৃগীরোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কী হতে পারে, সেটাও নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, কারও মৃগী রোগ থাকা মানেই তিনি সমাজবহির্ভূত, বুদ্ধিহীন ব্যক্তি নন। মৃগীরোগ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অসংক্রামক রোগ বিভাগের কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএনবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু নাসির রিজভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সানোফি বাংলাদেশের প্রাইমারি কেয়ার বিভাগের মার্কেটিং প্রধান সুমন মহসিন।