চুরির পণ্য ইসলামপুরের গুদামে

  • পণ্য খোয়া যাওয়ার ঘটনায় কোনো মামলা করেনি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ

  • কনটেইনারে পণ্য থাকার কথা ৩২,৯১৩ কেজি, ছিল ৬,১৪০ কেজি

কনটেইনার খোলার পর দেখা গেল ৫ ভাগের ৪ ভাগ মালামালই খোয়া গেছে। সম্প্রতি মোংলা বন্দরে
ছবি: সংগৃহীত

চীনের ওয়াইফ্যাং জিনশেং ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে কাপড় আনার চুক্তি করেছিল আজিজ অ্যান্ড সন্স। পণ্য কনটেইনারে তুলে বারকোড দেওয়া তালা ঝুলিয়ে ছবিও পাঠিয়েছিল ওয়াইফ্যাং। কিন্তু মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসের প্রস্তুতির সময় দেখা গেল তালা বদলে গেছে, খোয়া গেছে আমদানি করা পণ্যের বড় অংশ।

প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের পণ্য খুইয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পড়েছে বিপদে। তাদের সমস্যার সমাধান কে করবে, তা–ও বুঝতে পারছেন না এই আমদানিকারক।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। আমদানিকারক রাসেল রহমানের দাবি, ইসলামপুরে তাঁর প্রতিষ্ঠান আজিজ অ্যান্ড সন্স থেকে ১৫০ মিটার দূরের একটি কাপড়ের গুদামে তাঁর খোয়া যাওয়া পণ্য ছিল। সেখান থেকে বিক্রিও হচ্ছিল। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পণ্যগুলো জব্দও করে। গ্রেপ্তার করে দুই ব্যবসায়ীকে। গ্রেপ্তার দুজন পুলিশকে জানান, চট্টগ্রামের টেরিবাজার থেকে এ পণ্য কিনে এনেছেন তাঁরা। মোংলা বন্দর থেকে এ পণ্য খোয়া গেছে কি না, সে সম্পর্কে তাঁরা জানেন না।

ঘটনার পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ মামলাও করেনি। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে মোংলা বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায়। এটি দেখভালের দায়িত্ব মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ এবং মোংলা কাস্টম হাউসের। তারা পুলিশকে কিছুই জানায়নি, মামলাও করেনি।

আজিজ অ্যান্ড সন্সের কর্ণধার রাসেল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরে চীনা প্রতিষ্ঠান ৩১ হাজার ৯১৩ কেজি ফেব্রিকস পাঠায়। জাহাজে কনটেইনারে ওঠানোর পর বারকোড দেওয়া যে তালা লাগানো হয়েছিল, সেই বারকোডও নিয়ম অনুযায়ী মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পণ্য ছাড় করা হয়নি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে ওখানেই
রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত ৬ সেপ্টেম্বর পণ্য খালাসের সময় কাস্টমস ও বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী কনটেইনার ওজন করা হলে ৩১ হাজার ৯১৩ কেজির বদলে পাওয়া যায় ৬ হাজার ১৪০ কেজি পণ্য।

ঘটনায় শুল্ক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. শামসুল আরেফিন গত ২ সেপ্টেম্বর পণ্য চালানের যৌথ কায়িক পরীক্ষার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। তাঁরা কনটেইনারের সিল কেটে ভেতরে থাকা পণ্যের কায়িক পরীক্ষা ও সার্ভেয়ারকে দিয়ে সার্ভে করা হয়। সার্ভেতে ৬ হাজার ১৪০ কেজি কাপড় পাওয়া যায়। আট সদস্যের ওই কমিটির সদস্য রাজস্ব কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালাটা দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়। তাই আমরা আর কনটেইনার না খুলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরে ওজন করে মালও কম পাওয়া যায়।’

ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো শামসুল হক সাবজাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সামনেই কাপড় উদ্ধার করা হয়। তিনি শুনেছেন, ওই কাপড় ইসলামপুরেরই এক ব্যবসায়ীর।

মোংলা বন্দরের উপব্যবস্থাপক (ট্রাফিক) মো. সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময় এক পণ্যের ঘোষণা দিয়ে আমদানিকারকেরা অন্য পণ্য নিয়ে আসেন, তারপর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তবে আজিজ অ্যান্ড সন্স একই কাজ করেছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

ঢাকার ইসলামপুর ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন সদস্য বলেন, তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের লাইসেন্স ব্যবহার করে অনেকেই শুল্ক ছাড়া কাপড় আনেন বিদেশ থেকে। পণ্য খোয়া গেলেও কেউ কোনো উচ্চবাচ৵ করেন না। কিন্তু এবার সত্যিকারের আমদানিকারকের জিনিসপত্র খোয়া গেছে বলে বিষয়টি সামনে এসেছে। তাঁদের ধারণা, এটা কোনো একটা সিন্ডিকেটের কাজ। এই সিন্ডিকেট হয়তো মোংলা ও চট্টগ্রাম দুই জায়গাতেই সক্রিয়। সে কারণেই মোংলার খোয়া যাওয়া পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে চট্টগ্রামের টেরিবাজারে। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কাপড় এনে অনেক ব্যবসায়ী অল্প দামে বিক্রি করেন।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন মোংলা প্রতিনিধি সুমেল সারাফাত)