‘চেয়ারবন্দী’ কৈশোর নিয়ে বেড়ে উঠছে তারা

করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা নিয়ে গবেষণাটি করেছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।

ঘরবন্দী থাকার পর ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামের দক্ষিণ আগ্রাবাদ এলাকায় আবেদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েফাইল ছবি

দেশে করোনা মহামারি শুরুর আগেই কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য যে উদ্বেগজনক অবস্থায় ছিল, তা অন্তত একটি গবেষণায় দেখা গেছে। ওই গবেষণায় বলা হচ্ছে, দেশের শহর এলাকার ৬২ শতাংশ কিশোর–কিশোরী মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার মানসিক চাপের মধ্যে আছে। গবেষকেরা বলছেন, গত দুই বছরের মহামারি পরিস্থিতি তাদের স্বাস্থ্যকে আরও উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম জরুরি দিক হওয়া উচিত দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশির ভাগ কাজ এখন করোনার টিকা সংগ্রহ ও তা বণ্টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ডা. এস কে রায়, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক

করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে কিশোর–কিশোরীদের মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা নিয়ে গবেষণাটি করেছে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের গবেষকেরা। ১৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন–এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাকাজে অর্থায়ন করেছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।

গবেষক দলের প্রধান ছিলেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. এস কে রায়। এ গবেষণা ছাড়াও করোনাকালে তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রায় একই বিষয়ে আরও কয়েকটি কয়েকটি গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতি তীব্র থাকার সময়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কিশোর–কিশোরী মানসিক চাপে ছিল। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তা এখনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে আছে বলে এই পুষ্টিবিজ্ঞানীর ধারণা।

এস কে রায় প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম জরুরি দিক হওয়া উচিত দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশির ভাগ কাজ এখন করোনার টিকা সংগ্রহ ও তা বণ্টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু করোনাকালে কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাধুলা, বিতর্কসহ নানা ধরনের জ্ঞানচর্চার জন্য জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কিশোর–কিশোরীদের মানসিক চাপ কমাতে না পারলে তা মানসিক রোগে পরিণত হবে। তা তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ এবং একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করবে।

‘চেয়ারবন্দী’ কৈশোর

করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে কিশোর–কিশোরীদের ওপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গবেষণাটি করা হয়েছে। আটটি বিভাগীয় শহরের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরিপ চালানো হয়েছে। এ রকম ৩২টি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৪ হাজার ৬০৯ জন কিশোর-কিশোরীকে ছয়টি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের কিশোর-কিশোরী হিসেবে ধরে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। তাদের জনসংখ্যার বিন্যাস, আর্থসামাজিক অবস্থা, শারীরিক ক্রিয়াকর্ম, মানসিক চাপ ও খাদ্যাভ্যাসবিষয়ক প্রশ্ন করা হয়েছে। তবে গবেষণায় অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়নি।

গবেষণায় বলা হয়, শহরে থাকা কিশোর-কিশোরীদের ২৮ দশমিক ২ শতাংশ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মোটা বা স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে।

অবশ্য এমন সমস্যা শুধু কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে নয়, অন্যদের মধ্যেও রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০২১ সালের বিশ্ব পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। অর্থাৎ শহরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থূলতা দেশের সামগ্রিক গড়ের চেয়ে নয় গুণের বেশি।

উন্নত দেশগুলোতে ফাস্ট ফুড বেশি পরিমাণে খাওয়ার কারণে এ ধরনের স্থূলতার সমস্যা বাড়ছে। আর উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সামর্থ্য না থাকায় সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি ও ফলমূল খেতে পায় না। তারা ক্ষুধা মেটাতে বেশি পরিমাণে ভাত ও রুটির মতো শ্বেতসারজাতীয় খাবার বেশি খায়। এ কারণে তাদের এ ধরনের স্থূলতা বাড়ছে, যা একধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যা।

দেশের কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে যারা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত, তারা করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি। তারা প্রায় ঘরবন্দী অবস্থার মধ্যে ছিল। ফলে তারা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাসহ নানা ক্রিয়াকর্ম থেকে বঞ্চিত। এতে তাদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তারা টেলিভিশন, মুঠোফোনসহ নানা ধরনের ডিজিটাল যন্ত্রের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই শহরের কিশোর–কিশোরীর ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ চেয়ারবন্দী অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ তারা যতক্ষণ বাসায় থাকে, তার বেশির ভাগ সময় চেয়ারে বসে কাটায়। এতে তাদের শারীরিক স্থূলতা ও মানসিক চাপ বাড়ে। আর মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ খেলাধুলা ও নিয়মিত হাঁটাচলা করে অর্থাৎ সক্রিয় জীবনযাপন করছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ৪ ভাগের ১ ভাগ কিশোর–কিশোরীর ওজন মাত্রাতিরিক্ত। ২৮ শতাংশ কিশোর–কিশোরী স্থূলকায়। অন্যদিকে এই বয়সীদের ২৪ শতাংশের ওজন প্রয়োজনের চেয়ে কম দেখা গেছে। মানসিক চাপের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রায় ৫৬ শতাংশ কিশোর–কিশোরী মাঝারি মাত্রায় মানসিক চাপে থাকে। নিম্নমাত্রার মানসিক চাপ দেখা গেছে ৩৮ শতাংশের মধ্যে। আর অতিমাত্রায় মানসিক চাপে আছে প্রায় ৬ শতাংশ কিশোর–কিশোরী। এর অর্থ দেশের প্রায় ৬২ শতাংশ কিশোর–কিশোরী মাঝারি থেকে তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে আছে।

তীব্র মানসিক চাপ কাদের বেশি, সে বিষয়টিও গবেষণায় উঠে এসেছে। যাদের ওজন বেশি, যারা স্থূল, যারা ধূমপান করে এবং যারা অতিরিক্ত খাবার খায় তাদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি।

ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চাপ

গবেষক দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন আইসিডিডিআরবির নুরুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুমানা রইছ, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের খুরশিদ জাহান, আম্ব্রিনা ফেরদৌস ও সামিনা ইসরাত এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল করিম।

রুমানা রইছ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে করোনাকালে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আলোচনায় কম আসে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনা করে আমরা গবেষণার সূচকগুলো ঠিক করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের কিশোর-কিশোরীদের মানসিক চাপের ধরন আলাদা। তাই আমাদের দেশের পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে এখানকার মানসিক চাপের সমস্যার সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

গবেষকেরা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক চাপের বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে শীর্ষ কারণ হচ্ছে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকে। স্কুলের পরীক্ষায় কী ফলাফল হবে, কে কত স্থান পাবে, তা নিয়ে তাদের দ্বিতীয় দুশ্চিন্তা। এই বয়সে পরিবার ও সমাজ তাদের ‘বড় হচ্ছ, তোমার অনেক দায়িত্ব’ এমন একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে। তৃতীয় চাপ হিসেবে ওই সামাজিক প্রত্যাশা পূরণ তাদের সমস্যায় ফেলে। চতুর্থ চাপ হিসেবে রয়েছে পরিবারের আর্থিক সমস্যা ও পড়ালেখার কারণে বিশ্রামের সুযোগ না পাওয়া। পঞ্চম চাপ হলো পরিবারের নানা নির্দেশ ও দায়িত্ব পালন।

বাংলাদেশে করোনাকালে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আলোচনায় কম আসে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনা করে আমরা গবেষণার সূচকগুলো ঠিক করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের কিশোর-কিশোরীদের মানসিক চাপের ধরন আলাদা।
রুমানা রইছ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

কিশোর–কিশোরীরা সবচেয়ে কম চাপ অনুভব করে বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্ক থেকে। অন্যদিকে অতিরিক্ত চাপের কারণে এই বয়সীরা ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মধ্যে ধূমপানে অভ্যস্ত হওয়ার বিষয়টি বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, বিশ্বের কিশোর-কিশোরীদের ২০ শতাংশ মানসিক চাপে ভুগছে। সংস্থাটির সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সালে দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি জাতীয় জরিপ করে। তাতে দেখা যায়, দেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। শিশুদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। ওই জরিপে কিশোর-কিশোরীদের ওপরে আলাদাভাবে তথ্য নেওয়া হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ

কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বা অর্থায়ন বৃদ্ধির ব্যাপারে ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া কিশোর–কিশোরীদের মৌলিক অধিকার। কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করলে তা তিন গুণ সুফল বয়ে আনে। এখন বিনিয়োগ করলে চলমান স্বাস্থ্য ব্যয়ও কমে ও সামাজিক মূলধন বাড়ে। কিশোর–কিশোরীরা বড় বা বয়স্ক শিশু নয়, তাদের নিজস্ব কিছু শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাহিদা আছে। বৈশ্বিক রোগের প্রকোপ ও বৈশ্বিক জখমের একটি বড় কারণ কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা। বৈশ্বিকভাবে দেখা গেছে, কিশোরদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। অন্যদিকে কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ গর্ভধারণজনিত জটিলতা।

কিশোর–কিশোরীদের মানসিক চাপ কমাতে না পারলে তা মানসিক রোগে পরিণত হবে। তা তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ এবং একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করবে।
মো. হেলাল উদ্দিন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক

করোনা মহামারি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিশোর–কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনার মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এক বছরের বেশি সময় স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দী অবস্থায় কাটিয়েছে। এই সময় স্কুলে যাওয়া–আসা, স্কুলে খেলাধুলা থেকে তারা বিরত ছিল। একটি বিরাটসংখ্যক কিশোর–কিশোরী প্রায় সব ধরনের শারীরিক কাজকর্ম ও পরিশ্রম থেকে বিরত ছিল। এটা অনেকের স্থূলতা ও স্থূলতাজনিত বৈকল্যের প্রধান কারণ।

এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর–কিশোরীদের মানসিক চাপ কমাতে না পারলে তা মানসিক রোগে পরিণত হবে। তা তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ এবং একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করবে। আমরা যেমন দাঁতের যত্ন, চুলের যত্ন বা করোনাকালে হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে শিখছি, তেমনি মনের যত্ন নেওয়া আমাদের কিশোর–কিশোরীদের শেখাতে হবে। এ জন্য প্রধান দায়িত্ব মা–বাবা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। সেখান থেকে এ কার্যক্রম শুরু করার জন্য রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসতে হবে।

মহামারির কারণে অনেক কিশোর–কিশোরীর মা–বাবা বা অভিভাবকের চাকরি গেছে বা তাঁদের উপার্জন কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে পরিবারে, মানসিক চাপে পড়েছে পরিবারের কিশোর বা কিশোরীর ওপর। পরিবারে কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে বা কেউ মারা গেলে মানসিক চাপ বেড়েছে কিশোর–কিশোরীদের। বৈশ্বিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। যেকোনো পারিবারিক সহিংসতায় সবচেয়ে বড় মানসিক আঘাত আসে কিশোর–কিশোরীদের ওপর। বাংলাদেশে দেখা গেছে, করোনাকালে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের অর্থ কিশোরীর স্বাস্থ্য ও মৃত্যুঝুঁকি।