ছাত্রলীগ-যুবলীগের পুলিশগিরি!
শেখ রাজীব একজন মুক্ত আলোকচিত্রী। থাকেন ভূতের গলিতে। গত মঙ্গলবার বিকেলে কাজ সেরে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। গ্রিন রোডে ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্টের বিপরীতে ওষুধের দোকান নিউ আল রাজীর সামনে ছয়-সাতজন ছেলে পথ আটকায় তাঁর। ১৮-১৯ বছর বয়সী ছেলেগুলো রাজীবের ব্যাগ তল্লাশি করে দেখতে চায়।
‘আপনারা কারা’—রাজীব জানতে চান। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ছেলেরা বলে, ‘দেশের পরিস্থিতি ভালো না। কাউকে সন্দেহ হলে আমরা নিশ্চিত হতে চাইছি তাঁর ব্যাগে বোমাটোমা আছে কি না।’ রাজীব কথা না বাড়িয়ে ছেলেদের ওষুধের দোকানের ভেতরে ডেকে নিয়ে নিজের ব্যাগ দেখালে তারা কিছু না বলে চলে যায়। পরে অবশ্য রাজীব আশপাশের লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, ওরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ করে। প্রথম আলোর এ প্রতিনিধির কাছে ঘটনাটির বিবরণ দিয়ে রাজীব জানতে চান, ‘আওয়ামী লীগ কি যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে পুলিশের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে?’
রাজীবের মতো রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় অকারণে হয়রানির শিকার আরও অনেক মানুষ এখন এ প্রশ্নটির উত্তর জানতে চায়। এক গ্রিন রোড এলাকাতেই গত দুই দিনে কতিপয় অতি উৎসাহী যুবকের ‘পুলিশগিরির’ মুখে পড়েছে আরও মানুষ। গতকাল বুধবার দুপুরে পল্টন মোড়ে গোলাম রসুল নামে এক প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসায়ীকে রিকশা থেকে নামিয়ে ব্যাগ খুলে দেখাতে বাধ্য করেছে কয়েকজন যুবকের একটি দল। রসুল জানান, অদূরেই পুলিশ ছিল। তিনি চাইলেই পুলিশ ডাকতে পারতেন। ডাকেননি। কারণ পুলিশ তো দেখেও না দেখার ভান করছে।
কোথাও কোথাও অবশ্য সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের পুলিশের সঙ্গেই মাঠে নামতে দেখা গেছে। একজন সাংবাদিক জানান, মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের পর পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিককে দেখা গেল মাঠে। তাঁদের হাতে ছিল কালো টর্চ। পথচারীদের থামিয়ে ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করছিলেন তাঁরা। দুই-একজন পথচারী এ নিয়ে কিছুটা প্রতিবাদমুখর হতেই শ্রমিক লীগ পরিচয়ধারী ওই শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন।
গতকাল রাজধানীর পথে পথে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে তাঁরা কেউই কাউকে হয়রানি করার বিষয়টি স্বীকার করেননি।
শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিই নাই। তার পরও হয়তো কোথাও কোথাও শ্রমিকেরা মাঠে নেমে থাকতে পারেন। আবার আমাদের বিব্রত করার জন্য কেউ আমাদের নাম ব্যবহারও করতে পারেন।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘সংঘাত এড়াবার নীতি নেওয়ার কারণে আমরা কেউই সেভাবে মাঠে নামছি না। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানও ছাত্রলীগ তেমন একটা মাঠে নেই বলে জানান। তাঁকে গ্রিন রোডে ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের পুলিশগিরি’ সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, ‘কারা এসব করছে আমরা খতিয়ে দেখব এবং আমাদের সংগঠনের কেউ এমন কিছু করে থাকলে ব্যবস্থা নেব।’