ছিটমহল বিনিময়ে প্রকাশ্য সমর্থন দিলেন মমতা
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে চোখে পড়ার মতো তৎপরতা দেখা গেছে গত দুই দিনে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ে প্রকাশ্য সভায় তাঁর সমর্থন দিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার। এর আগের দিন সীমান্ত চুক্তির জন্য সমর্থন আদায় করতে আসাম রাজ্যের দলীয় সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ।
গতকাল কোচবিহারের নয়ারহাট থানার ডাকুরহাটে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ছিটমহল বিনিময়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছেন মমতা। মমতার সভাস্থল ডাকুরহাটের ১৭০ মিটার দূরেই ভারতীয় ভূখণ্ডের বাংলাদেশের ছিটমহল করলা। এই জনসভায় যোগ দিয়ে বেলা দেড়টায় হাজারো মানুষের করতালির মধ্যে মমতা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চায়, এই চুক্তি সম্পাদিত হোক। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে এই সমর্থনের কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছি। আমরা চাই, ছিটমহলের মানুষ ফিরে পাক তাদের মৌলিক অধিকার।’
মমতা আরও বলেন, ছিটমহলবাসীর উন্নয়নের জন্য এখানে গড়তে হবে রাস্তাঘাট, বাজার, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল। আর এসব উন্নয়নকাজের খরচ বহন করতে হবে কেন্দ্রকে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল আছে। সভার শুরুতে এর স্মারক হিসেবে ১৬২টি গোলাপের তোড়া দিয়ে মমতাকে শুভেচ্ছা জানান ছিটমহলবাসী। মমতাও প্রবীণ ১৪ জন ছিটমহলবাসীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সংবর্ধিত করেন।
এদিকে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে মমতার সম্মতি মেলায় ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সন্তোষ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, আজকের রাজ্য সরকারের ঘোষণা ছিটমহলবাসীকে নতুনভাবে জীবনযাপনের পথের সন্ধান দিয়েছে।
এদিকে আসামের দলীয় সাত সাংসদকে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সময় নষ্ট না করে রাজ্যে গিয়ে সীমান্ত চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা মানুষকে বোঝান।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে দলীয় কার্যালয়ে অমিত শাহ সাংসদদের বলেন, এই চুক্তি আসামের মঙ্গলের জন্য। এই চুক্তির রূপায়ণের পর আসামে অনুপ্রবেশই শুধু বন্ধ হবে না, চোরাচালান থেকে শুরু করে যাবতীয় অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে।
আসামের চারবারের সাংসদ রাজেন গোহাঁই ও প্রথমবার জয়ী রামপ্রসাদ শর্মা গতকাল সংসদ ভবনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই চুক্তি যে কতটা দরকার, এই বৈঠকের পর তা আরও পরিষ্কার হলো। আমরা দলীয় নেতাদের আরজি জানাব, অবিলম্বে যেন এই সংবিধান সংশোধন বিল পাস করানো হয়।’ সংসদের চলতি অধিবেশনেই সরকার বিলটি পাস করাতে চাইছে। তবে কবে তা আনা হবে, এখনো ঠিক হয়নি।
কুড়িগ্রামে আটক তিন: কুড়িগ্রাম অফিস জানায়, ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বিরোধী ইউনাইটেড কাউন্সিলের (সিইউসি) তিন ভারতীয় নেতা-কর্মীকে আটক করেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার পুলিশ। গতকাল ভোরে তাঁদের আটক করা হয়। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন সিইউসির চেয়ারম্যান এবং ৪ নম্বর বড় খিঙ্গীর ছিটমহলের বাসিন্দা গোলাম মতিন (৫০), পাটগ্রাম উপজেলার পানবাড়ী ছিটমহলের সেলিম মুন্না (৩৫) এবং বাঁশকাটা ছিটমহলের মকছুল হোসেন (৪৫)। গত বুধবার রাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ছিটমহল থেকে তাঁদের সমর্থকদের এনে ১৫০ নম্বর ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার কালীর হাটে বৈঠক করা হয়। বৈঠক শেষে অন্যরা বাড়ি ফিরলেও তিনজনকে পুলিশ আটক করে।