হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সেনাবাহিনীর অভিযান।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সফল অভিযানে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এর ফলে দেশে বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলা হয়নি বলে জানান তিনি।


আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে অন্তত দুটি সংগঠন দেশের বাইরে থেকে দেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে, এটি কতটুকু সঠিক, এমন প্রশ্নের জবাব সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘আমি দুটি সংগঠন বলব না। আমি বলব, দুজন ব্যক্তি। আমাদের কাছে দুজন ব্যক্তির ইনফরমেশন আছে, হয়তো তারা দেশের বাইরে অবস্থান করলেও করতে পারে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তাদের বিষয়ে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’

সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৬ সালে ১ জুলাই তারিখে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই হামলায় জঙ্গিরা ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিক নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানিজ, ১ জন ভারতীয় এবং ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। ওই অভিযানে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। তিনি বলেন, ওই হামলায় করা মামলার তদন্তভার পায় সিটিটিসি। হামলায় জড়িত সব জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে পাঁচজন জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানে নিহত হন। জঙ্গি হামলায় সম্পৃক্ত ১৩ জন সিটিটিসির বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। ঘটনার এক বছরের মাথায় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সফল তদন্ত শেষে হামলার পরিকল্পনাকারী, অর্থ সরবরাহকারী, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান
প্রথম আলো

সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৯–এর ২৭ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন আদালত। এই রায়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। হোলি আর্টিজানে হামলার পর সিটিটিসি কল্যাণপুরে অপারেশন স্ট্রম২৬, নারায়ণগঞ্জের অপারেশন হিট স্ট্রম এবং গাজীপুরের পাতার টেকে অপারেশন স্পেট-৮সহ দেশে উচ্চমাত্রার (হাইলি রিস্ক) অভিযান চালায়। সিটিটিসির গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে পরিচালিত এসব অভিযানে ৬৩ জন জঙ্গি নিহত হন। সিটিটিসির এমন তৎপরতার কারণে জঙ্গিদের তৎপরতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সিটিটিসি শুধু জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। অভিযানের পাশাপাশি তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন সব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র–শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও জনপ্রতিনিধি, কারারক্ষী, কারা কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। এ নিয়ে সারা দেশে ১৭৪টি সভা সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। এই অবস্থায় জঙ্গিদের হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই বললেও চলে।

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় আদালত বড় মিজানকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তাহলে কি সিটিটিসির তদন্তে গাফিলতি ছিল বা মিজানের নাম ভুল করে এসেছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ভুল করে তার নাম আসেনি। আমরা পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি। কিন্তু রায়ের বিষয়টি একান্তই আদালতের নিজস্ব বিষয়।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সদস্যসহ জুন্নুদ আল তাওহিদ ও কানাডায় বসবাসরত তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে এসে নব্য জেএমবি তৈরি করে। এই দেশের জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।