জাপান থেকে আসা দুই শিশুর মা-বাবার তিন আবেদন খারিজ

মা এরিকো নাকানো ও বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে তাঁদের মেয়েসন্তানেরা
ছবি: সংগৃহীত

জাপান থেকে আসা দুই শিশুর বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলে তাদের মা এরিকো নাকানো ও বাবা ইমরান শরীফের পরস্পরের বিরুদ্ধে করা পৃথক আদালত অবমাননার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

দুই শিশুর স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটি সামনে রেখে জাপান ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে তাদের মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর করা আবেদনও খারিজ হয়েছে।

পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

গত ১৯ মে আপিল বিভাগ আবেদনগুলো শুনানির জন্য ২ জুন তারিখ রেখেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবেদনের ওপর শুনানি হয়।

আদালতে এরিকো নাকানোর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আকতার ইমাম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রাশনা ইমাম ও কামাল হোসেন।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের মা ও বাবার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপিল বিভাগের আগের আদেশ অনুসারে দুই শিশু তাদের মায়ের কাছে থাকবে। বাবা শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। কোনো ইস্যু বা অভিযোগ থাকলে তা পারিবারিক আদালতে উপস্থাপন করা যাবে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেন, ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটির (ইমরান শরীফের করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। ইমরান শরীফ তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।

আপিল বিভাগের এই আদেশ অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলে এরিকো নাকানো গত ২৪ এপ্রিল ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন।

অন্যদিকে, ১৩ ফেব্রুয়ারির আদেশ অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলে শিশুদের বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফ ১৬ মে এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন।

দুই শিশুর গ্রীষ্মকালীন ছুটি সামনে রেখে জাপান ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে এরিকো নাকানো ১৭ মে আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন।

আজ পৃথক তিনটি আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানিতে বলা হয়, দুই শিশু নিয়ে পারিবারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে আগামী রোববার শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

দুই পক্ষের আইনজীবীর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ পৃথক তিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই এরিকো নাকানো ও ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। তাঁদের তিনটি মেয়েসন্তান রয়েছে।

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকো নাকানোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান শরীফ। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে রয়েছে।

ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে গত বছরের ১৯ আগস্ট রিট করেন এরিকো নাকানো। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট করেন ইমরান শরীফ।

পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে বলে গত ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শিশুদের মা এরিকো নাকানো লিভ টু আপিল করেন। তার নিষ্পত্তি করে শিশুরা মায়ের কাছে থাকবে, আর তাদের বাবা শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলে ১৩ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ।