জাহাজে তোলা যায়নি ১৯০০ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য

চট্টগ্রাম বন্দর
ফাইল ছবি

আজ রোববার সকালে তিনটি কনটেইনার জাহাজের চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই তিন জাহাজে রপ্তানি হবে চার হাজার কনটেইনার পণ্য। এ জন্য গতকাল শনিবার রাতের মধ্যে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপো থেকে এসব কনটেইনার বন্দরে নিতে হবে। পরিবহন ধর্মঘটের আগে প্রায় অর্ধেকসংখ্যক কনটেইনারে বন্দরে নেওয়া হলেও গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ১ হাজার ৯০০ কনটেইনার বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া যায়নি।

ধর্মঘটের প্রথম দিন আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কিছুসংখ্যক গাড়ি চলাচল করলেও দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকালেই চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপো থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তাতে ধর্মঘট শুরুর দুই দিনের মাথায় রপ্তানি পণ্য পরিবহনে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আজ সকালে ছেড়ে যাবে এমন তিন জাহাজের একটি ‘এএস সিসিলিয়া’।

জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি ক্রাউন নেভিগেশন লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহেদ সরোয়ার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সময়সূচি অনুযায়ী রোববার জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বোর উদ্দেশে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য। তবে ধর্মঘটের কারণে এখনো ডিপোতে আটকা আছে ৬৫০ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য। এক দিন দেরির জন্যও এসব কনটেইনার ইউরোপ-আমেরিকার বন্দরে পৌঁছাতে এক সপ্তাহ বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

সিসিলিয়া ছাড়াও ‘এক্সপ্রেস লোটসি’ জাহাজে ৮০০ এবং ‘ব্যাংকক’ জাহাজের ৪৫০ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ডিপোতে আটকা পড়েছে। এসব রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই পোশাক খাতের।

জানতে চাইলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা সংকট কাটিয়ে পোশাক রপ্তানি বাড়ার বড় সুযোগ আসছে। ক্রয়াদেশ বাড়ছে। ঠিক এ সময়ে এ ধরনের কর্মসূচির কারণে এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

ধর্মঘটে শুধু রপ্তানি পণ্য পরিবহন বন্ধই হয়নি, রপ্তানি পণ্য পরিবহনের পুরো চক্রই পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। রপ্তানি পণ্য পরিবহনের প্রক্রিয়া হলো, রপ্তানি পণ্য প্রস্তুত হওয়ার পর কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে প্রথমে চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলোতে নেওয়া হয়। ডিপোতে আনার পর কাভার্ড ভ্যান থেকে পণ্য নামিয়ে শেডে রাখা হয়। সেখানে নানা প্রক্রিয়া শেষ করে কনটেইনারে ভরে গাড়িতে করে বন্দরে নিয়ে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কনটেইনার। ধর্মঘটের কারণে কারখানা থেকে যেমন ডিপোতে রপ্তানি পণ্য আনা যাচ্ছে না, তেমনি ডিপোতে আটকে থাকা পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না।

ধর্মঘটের আগে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে সাড়ে সাত হাজারের মতো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ধারাবাহিকভাবে বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন নতুন করে আটকা পড়েছে ১ হাজার ৯০০ কনটেইনার। সব মিলিয়ে ডিপোতে গতকাল সাড়ে ৯ হাজার রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার আটকা পড়েছে। ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের স্তূপ যত বাড়বে, পণ্য রপ্তানি প্রক্রিয়ায়ও দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন সংগঠনগুলো। কর্মসূচির প্রথম দিন থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে শুরু করে। তবে শুক্রবার খুব বেশি প্রভাব না পড়লেও গতকাল থেকে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি পণ্য খালাসের কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।

রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি পণ্যের বড় অংশ পোশাকশিল্পের কাঁচামাল। এই কাঁচামাল খালাস না হওয়ার অর্থ পোশাক প্রস্তুতকারকদের নির্ধারিত সময়ে পণ্য উৎপাদনে যেতে না পারা। ফলে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ার প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার প্রথম দিন ১ হাজার ১৬৬ কনটেইনার পণ্য খালাসের চাহিদাপত্র দিয়েছিলেন আমদানিকারকেরা। এর মধ্যে ৪২২ কনটেইনার পণ্য খালাস হয়। পণ্যবাহী গাড়ি না থাকায় বাকি পণ্য খালাস করা যায়নি। গতকাল বন্দর থেকে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিন শুক্রবার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কিছুটা হলেও সচল ছিল। তবে শনিবার কোনো কনটেইনার যেমন খালাস হয়নি, তেমনি ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী একটি কনটেইনারও বন্দরে আনা যায়নি।

গত সেপ্টেম্বরে পরিবহনশ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে ৩৫ ঘণ্টায় এক কনটেইনার পণ্যও রপ্তানি হয়নি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সেবার বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন ১৫ দফা দাবিতে ওই কর্মবিরতি পালন করেছিল।