জিকা সংক্রমণ রোধে বন্দরগুলোয় নজরদারি বাড়াবে সরকার

জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নৌ, বিমান ও স্থলবন্দরগুলোয় নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালা ২০০৫ সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি কমিটির বর্ধিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ কমপক্ষে ২০টি প্রতিষ্ঠানের ৭০ জন প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে জিকার সংক্রমণ ঘটেছে এমন দেশগুলো থেকে কেউ এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক আবুল খায়ের মো. শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সব কটি বন্দরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সেই ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। সভায় স্থলবন্দরে নজরদারি বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেউ কেউ। আক্রান্ত দেশ থেকে এসে কেউ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারেন—এই বিবেচনায় সেখানেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের দল আছে। এই দলগুলো স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজটি করবে। জিকার সংক্রমণ হয়েছে এমন দেশ থেকে আসা মানুষের তথ্যও রাখা হবে।
তবে এখনো পর্যন্ত জিকা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে উল্লেখ করেছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখনো পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে আছে। রোগ ছড়ানোর মৌসুম এটি নয়। সেদিক থেকে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে করছি না।’
বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মশা নিধনের অভিযানও জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালা ২০০৫ সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি কমিটি জিকার সংক্রমণ রোধে নীতিমালা ও নির্দেশিকা তৈরির কাজও দ্রুত শুরু করবে বলে বৈঠক সূত্র জানায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করেছে গত রোববার। ওই দিনই সরকার জরুরি বৈঠকের ঘোষণা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, জিকার সংক্রমণে দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের গর্ভস্থ শিশুরা এনকেফালি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই শিশুরা বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্মায়। এদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। শুধু ব্রাজিলেই গত অক্টোবরে এমন চার হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। সতর্কতা জারির এক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একজনের শরীরে জিকার সংক্রমণ ধরা পড়ে। জিকার লক্ষণ ডেঙ্গুর মতোই। চার-পাঁচ দিন পর এই রোগ এমনি সেরে যায়। তবে গর্ভস্থ শিশুর জন্য এটি মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।