জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ৫ বছর আগে পুলিশও পুরস্কার ঘোষণা করেছিল
আনসার আল ইসলামের নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে বা তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ পুলিশও পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। পুরস্কারের এই অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকা।
সৈয়দ জিয়াউল হকের (মেজর জিয়া নামে পরিচিত) ব্যাপারে তথ্য দিতে গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। এরপর এই জঙ্গি নেতা নতুন করে আলোচনায় আসেন।
বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তর ২০১৬ সালের ২ আগস্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (বর্তমান নাম আনসার আল ইসলাম) কথিত সামরিক শাখার প্রধান মেজর জিয়া ও নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এই দুজন ছাড়া আরও আটজনকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।
এর মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে বরখাস্ত মেজর জিয়া বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ বিভিন্ন ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত। আর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। এ ছাড়া এ দেশে আইএসপন্থী জঙ্গিদের প্রায় সবগুলো হামলার তিনি পরিকল্পনাকারী।
তামিম চৌধুরী ২০১৬ সালেই নারায়ণগঞ্জে পুলিশের এক অভিযানে নিহত হন। তবে আল–কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নেতা মেজর জিয়া এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাঁর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত জঙ্গি নেতা সৈয়দ জিয়াউল হক হয়তো অন্য দেশে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন। তাঁকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১০ জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে একাধিকবার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশের অভিযানে মারা গেছেন। চারজন ধরা পড়েছেন। আর চারজন পলাতক। যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের কেউ ধরিয়ে দেয়নি।
২০১৪ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন এবং জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ সদর দপ্তর। বোমা মিজান ২০১৮ সালে ভারতে ধরা পড়েছে বলে সে দেশের গণমাধ্যমে খবর বের হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) প্রথম আলোকে বলেন, বোমা মিজান ধরা পড়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিটিটিসির একটি টিম ভারতে গিয়েছিল। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের ঘটনায় একজন অভিযুক্ত হওয়ায় সে দেশে তাঁর বিচার চলছে।
আর পুরোনো জেএমবির এখনকার শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন ভারতেই অবস্থান করেই জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সময়ে দেশি–বিদেশি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত জঙ্গি নেতা সৈয়দ জিয়াউল হক হয়তো অন্য দেশে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন। তাঁকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লেখক, প্রকাশক, ব্লগার এবং সমকামী অধিকারকর্মী হত্যায় জড়িত হিসেবে আনসার আল ইসলামের ছয়জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ। এই ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে ২০১৬ সালে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাঁদের মধ্যে একজন মুকুল রানা পরবর্তী সময়ে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। তিনজন পুলিশের হাতে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য দুজনের এখন পর্যন্ত ধরা পড়েননি। তাঁরা হলেন সেলিম ওরফে হাদী ও সাজ্জাদ ওরফে সজীব।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, পুরস্কার ঘোষিত পলাতক এই দুই জঙ্গির মধ্যে সেলিম ওরফে হাদী অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত বলে তদন্তে এসেছে। তবে তাঁর প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সাজ্জাদ ওরফে সজীবেরও প্রকৃত পরিচয় বের করতে পারেনি পুলিশ।