জ্ঞান ফিরে তরুণী বললেন, বাসে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় তাঁকে

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে বাস থেকে পড়ে গুরুতর আহত নারী পোশাককর্মী জ্ঞান ফেরার পর অভিযোগ করেছেন, বাসে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন চালক। তাঁর হাত থেকে বাঁচতে ২০ বছরের ওই তরুণী চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়েছিলেন।

গত ১৯ মে রাতে নগরের শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কের রাহাত্তারপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছয় দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই তরুণী গত মঙ্গলবার বিকেলে নগরের ভাড়া বাসায় ফিরেছেন। বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন এই পোশাকশ্রমিক। তিনি নগরের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটির বাসযোগে বাসায় ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে।

বুধবার তাঁর বাসায় বাকলিয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হকসহ নারী কর্মকর্তারা যান। এ সময় ঘটনার শিকার ওই তরুণী ফাঁকা বাসে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল বলে পুলিশকে জানান। তিনি পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার একবার জ্ঞান ফিরলে ওই তরুণী একবার পুলিশকে জানিয়েছিলেন তিনি বাস থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন ধর্ষণচেষ্টার কথা বলেননি বলে জানান ওসি। অবশ্য এরপর আবার জ্ঞান হারান তিনি। পরে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়।

বুধবার ওই তরুণীর বরাত দিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই তরুণী আগে একবার বলেছিলেন, বাস থেকে পড়ে গেছেন। আজ (বুধবার) তিনি জানান, বহদ্দারহাট থেকে বাসটি সংযোগ সেতুর দিকে যাওয়ার পথে রাত ১০টার পর আর কোনো সহকর্মী সেখানে ছিলেন না। তখন তাঁর বাসার স্টপেজে তাঁকে নামতে দেননি চালক।

গাড়িটি তখন চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী। চালক দরজার সামনে এসে তরুণীকে ওখানে নামতে বাধা দেন। বাসটিও চলতে থাকে। একপর্যায়ে তরুণীকে বাসের পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে জানান তিনি। পরে তিনি বাস থেকে লাফ দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’

বাসচালক ও সহকারীকে পুলিশ ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে। বাসটি ছিল ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী নেওয়ার জন্য ভাড়া করা। তাঁদের ধরতে রাতেই বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, ‘বাসচালক ও সহকারীকে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। ওই তরুণী তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছেন। সে জন্য তিনি লাফ দেন বাস থেকে। এ ঘটনায় মামলা হবে।’

লাফ দেওয়ার পর তরুণীটি মাথায় আঘাত পান। স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। প্রথমে চান্দগাঁও থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর বাকলিয়া থানা-পুলিশ গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় নারীকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে তাঁর মাথার সিটি স্ক্যান করা হয়। মাথায় রক্ত জমাটবাঁধা ছিল।

এরপর হাসপাতালে গিয়েও পুলিশ তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিল একবার। কিন্তু তখন তাঁর জ্ঞান ভালোভাবে ফেরেনি বলে পুলিশ জানায়। মঙ্গলবার কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বাসায় ফিরেছেন তিনি। তবে তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন বলে জানায় পুলিশ। বাসায় তাঁর চিকিৎসা চলছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা নোবেল চাকমা।

চট্টগ্রামে এর আগে বাসে নারীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে দুটি। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মৌলভী পুকুরপাড় এলাকায় এক পোশাককর্মীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ বাসের চালক ও এক সহকারীকে গ্রেপ্তার করে। একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক গৃহবধূকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনায় চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুটি মামলাই এখন বিচারাধীন।

এ ছাড়া গত বছরের (২০২১) ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বাসচালক, সহকারীসহ পাঁচ পরিবহনশ্রমিক। দেশব্যাপী আলোচিত হয় এ ঘটনা। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকায় এক গৃহবধূকে যাত্রীবাহী বাসে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় চালকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।