ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনাবেচা করছেন তিন শতাধিক ক্রেতা-বিক্রেতা। গত শুক্রবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনাবেচা করছেন তিন শতাধিক ক্রেতা-বিক্রেতা। গত শুক্রবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের প্রধান কাঁচাবাজারের একতলা ভবনটি চার বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সেখানে দেড় শতাধিক দোকানপাট খুলে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উপজেলা শহরটির সবচেয়ে বড় ও প্রধান কাঁচাবাজারে ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে এটি হাট-চাঁদনি বলে পরিচিত। এই ভবনে ১৫২টি দোকান রয়েছে। বেশির ভাগই কাঁচা সবজি, চাল ও ক্ষুদ্র মুদির দোকান। উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মরহুম রফি উদ্দিনের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তবে সংস্কারের অভাবে এত দিনে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তখন বহু লোকের প্রাণহানি ঘটতে পারে। ভবনটির দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি টিনশেড ভবন, যার একটিতে আটা-ময়দা, অপরটিতে মাছ ও মাংস বিক্রি হয়।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল রয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ছাদের নিচে বাঁশের চাটাই দিয়ে রেখেছেন। ব্যবসায়ী মিন্টু মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। এখন খুব ভয়ে ভয়ে থাকেন কখন ছাদ ভেঙে পড়ে।

আরেক ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে এই মৃত্যুর খাঁচায় পড়ে আছি। জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। যেকোনো সময় ভবনটি সম্পূর্ণ ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সরকারিভাবে এটি নতুন করে নির্মাণ বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন উল্লেখ করে সাইনবোর্ড দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। গত সপ্তাহে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। আর সাইনবোর্ড দেখে এখানে ক্রেতার সমাগম কমে গেছে।’

কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর এই বাজারের চাল ব্যবসায়ী অজয় কুমার ছাদের একটি অংশ ধসে মারা যান। এরপর প্রশাসনের লোকজন নড়েচড়ে বসেন। কয়েক দফা তদন্ত করেন। কিছুদিন পর এই ঘটনায় আর কোনো কিছুই লক্ষ করা যায়নি।

কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজে অনেক ত্রুটি ছিল। এ ছাড়া ছাদে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। যে কারণে অল্প সময়ে ভবনটি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক আগেই এটি সংস্কার করা উচিত ছিল।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল ওহাব বলেন, তাঁরা ২০১৩ সালে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এরপর ব্যবসায়ীদের ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বলা হয়। তাঁরা যাননি। ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন। তিনি আরও বলেন, ভবনটি ভেঙে সেখানে চারতলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে, কিন্তু অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পেলে তাঁরা নকশা তৈরি করে অর্থ বরাদ্দের জন্য আবেদন করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ছাদেকুর রহমান বলেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ব্যবহার না করার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নতুন আরেকটি ভবন নির্মাণের জন্য যোগাযোগ শুরু করেছেন।