টেকনাফে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ, ইটপাটকেলে ১২ পুলিশ আহত
খাবার বিতরণে ‘বৈষম্যের’ অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরোনো রোহিঙ্গারা রোববার বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তাঁদের ছোড়া ইটপাটকেলে অন্তত ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের নাম–ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গারা বলছেন, তাঁদের রেশন কার্ড ও খাবার বিতরণে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। তাই গত জুলাই মাসে তাঁরা রেশন নেননি। এই ক্ষোভে শুধু পুরুষেরা নন, নারীরাও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
কক্সবাজার-১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক মো. তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, রোববার ভোররাত ৫টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পুরোনো রোহিঙ্গারা নয়াপাড়া ক্যাম্পে জড়ো হওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা এপিবিএন পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ৫টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। রোহিঙ্গা নারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে পুরোনো (১৯৯২ সালে আসা) ও নতুন (২০১৭ সালে আসা) রোহিঙ্গারা বসবাস করছেন। পুরোনো রোহিঙ্গাদের খাবার (ফুড কার্ড) নতুন রোহিঙ্গাদের খাবারের (ফুড কার্ড) চেয়ে পরিমাণে ভিন্ন। সব রোহিঙ্গার মধ্যে সমপরিমাণ খাবার বিতরণের জন্য পুরোনো রোহিঙ্গাদের ফুড কার্ড ফেরত নিয়ে গত মাসে নতুন ফুড কার্ড ইস্যু করা হয়। নতুন ফুড কার্ড অন্যান্য ক্যাম্পের সমসাময়িক (২০১৭ সালে) আসা নতুন রোহিঙ্গাদের কার্ডের অনুরূপ হওয়ায় নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরোনো রোহিঙ্গারা এখনো নতুন কার্ড গ্রহণ করেননি। এমনকি তাঁরা জুলাই মাসের রেশন তোলেননি।
নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরোনো রোহিঙ্গাদের দাবি, নতুন রোহিঙ্গাদের ফুড কার্ড এবং তাঁর কার্ড একই রকম হওয়ায় সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যা তাঁরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। অন্যদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অফিস ও ইউএনএইচসিআর অফিস তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বলে অভিযোগ রোহিঙ্গাদের।
এপিবিএন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ব্লক থেকে রোহিঙ্গা নারীরা নয়াপাড়া ক্যাম্পে জড়ো হতে থাকেন। তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা। তবে তাঁরা দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এভাবে সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে।
একপর্যায়ে নারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে অতর্কিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তাঁরা পুলিশের অস্ত্র টানাহেঁচড়া করেন। এ সময় পুলিশ জানমালের রক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শটগানের ৫টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে নারীরা পালিয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আহত এপিবিএন পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, পর্যাপ্ত রেশনের দাবিতে রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করেছিলেন। কে বা কারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও বিক্ষোভকারী রোহিঙ্গা নারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। ছোটাছুটি করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী আহত হয়েছেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজার-১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক মো. তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, ফুড কার্ডকে কেন্দ্র করে টেকনাফের রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরোনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন বিক্ষোভের চেষ্টা করলে তাদের এপিবিএন ক্যাম্পে ডেকে বোঝানো হয় এবং তারা তা মেনে নেয়। সিআইসি এবং ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শামছু-দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের পেছনে একটি চক্র উসকানি দিচ্ছে। পুরোনো রোহিঙ্গারা দুষ্ট। তাদের ছোট একটা গ্রুপ আছে। তারা পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। পরিকল্পিত দ্বন্দ্বটা লাগাচ্ছে। সব নজরে আছে। ঘটনায় কারা জড়িত, বের করার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে রয়েছে।