ট্যাংকের পানি পড়ছেই বাসাবাড়িতে সংকট
প্রখর রোদের মধ্যে হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ পথচারী ধন্দে পড়তে পারেন বৃষ্টির শব্দ শুনে। ওপর থেকে অবিরল ধারায় পানি পড়ছে। বাতাস থাকলে সেই পানির ঝাপটা পথচারীকে কিছুটা ভিজিয়েও দেয়। একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন এটি আসলে বৃষ্টি নয়। ময়মনসিংহ পৌরসভার পুরোনো পানির ট্যাংকের অসংখ্য ফুটো দিয়ে অনবরত পানি পড়ার শব্দ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের বিশ্বেশ্বরী দেবী সড়কে পৌরসভার পানির ট্যাংক ফুটো হয়ে গেছে ১০ বছর আগে। সেই থেকেই পানি চুইয়ে পড়া শুরু। গত তিন বছরে ফুটোগুলো বড় হওয়ায় বেড়েছে পানি পড়ার পরিমাণ। অথচ শহরের তিনটি এলাকায় প্রায়ই পানিসংকট দেখা দিচ্ছে। এতে লোকজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
বিশ্বেশ্বরী দেবী সড়কের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কমপক্ষে তিন বছর ধরে এভাবেই ট্যাংক থেকে পানি পড়ছে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় প্রায়ই বাসাবাড়িতে পানি থাকে না। বিপাকে পড়তে হয় শতাধিক পরিবারের সদস্যদের। দুপুরে প্রায়ই পানি পান না বিশ্বেশ্বরী দেবী সড়ক, ঈশান চক্রবর্তী সড়ক ও গোলপুকুর পাড়ের বাসিন্দারা।
ঈশান চক্রবর্তী সড়কের বাসিন্দা বছিরুন বেগম ও জিয়াউল আলম বলেন, প্রতি মাসে নিয়মিত বিল দিলেও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা হয় না। বিশেষ করে দুপুরে প্রায় দিনই পানি পাওয়া যায় না।
ময়মনসিংহ পৌরসভার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে প্রায় ২০০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতার ওই পানির ট্যাংকটি নির্মাণ করা হয়। এটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে কাছাকাছি জায়গায় ৬৮০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতার আরও একটি ট্যাংক নির্মাণ করে জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। নতুন ট্যাংকটি চালু হলেও দিনে মাত্র একবারই পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়।
পানির ট্যাংকের অপারেটর মামুন পারভেজ জানান, তিন মাস ধরে তিনি এই ট্যাংকের দায়িত্বে আছেন। তিন মাস ধরেই দেখছেন দিন-রাত ট্যাংকের ফুটো দিয়ে পানি পড়ছে। তবে ওই এলাকার নিষ্কাশনব্যবস্থা ভালো থাকায় এবং খুব কাছেই ব্রহ্মপুত্র নদ থাকায় নালা উপচে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় না।
সদ্য অবসর নেওয়া পানি ট্যাংকের অপারেটর আবদুস সালম জানান, অনেক বছর ধরেই ট্যাংকের ফুটো দিয়ে পানি পড়ছে। তবে তিন বছর ধরে বেশি মাত্রায় পানি পড়ছে। তিনি জানান, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ওই ফুটোগুলো দিয়ে কমপক্ষে ৩০০-৪০০ লিটার পানি পড়ছে।
ওই ট্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আজিজুল হক বলেন, দুটি পাম্প সচল রাখার জন্য পুরোনো ট্যাংকটি ব্যবহার করা হয়। তিনি পানি অপচয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দ্রুতই পুরোনো ট্যাংকের পাম্পের সংযোগ নতুন ট্যাংকটিতে দেওয়া হবে। তখন পুরোনো ট্যাংকটিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন হওয়ার পরেও পুরোনো ট্যাংকটির ফুটো সংস্কার না করার বিষয়ে তিনি বলেন, বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ফুটোগুলো সংস্কার করা হয়নি।