অবশেষে ট্রেনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে খালাসের পর খালি কনটেইনারে করে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ট্রেনে কনটেইনারে করে ভারতে পণ্য রপ্তানির ফলে লজিস্টিক খাতে প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়া সাশ্রয়ী হবে। এ বছর ভারতে পণ্য রপ্তানি ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার।
ট্রেনে করে পরিবহন করা এসব পণ্য পেট্রাপোল, বেনাপোল এবং গেদে-দর্শনা হয়ে যেকোনো নির্দিষ্ট একটি স্থলবন্দর হয়ে চলাচল করবে।
ট্রেনে পণ্য রপ্তানি নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার নিকট দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আলোচনা চলে। গত মাসে ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে।
ট্রেনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির বিষয়ে গত ১৭ মে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুল্ক কর্তৃপক্ষ একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশের পণ্য রেলে পরিবহনের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এর পাশাপাশি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য খালাসের পর খালি কনটেইনারে করে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রপ্তানি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো খালি এসব কনটেইনার ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে আগ্রহী।
বর্তমানে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ও বিরল-রাধিকাপুর পুরোপুরি সচল। এর মধ্যে দর্শনা-গেদে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) রুট-১, রহনপুর-সিংগাবাদ টিএআর-২ রুট হিসেবে চিহ্নিত।
ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষের আদেশে বলা হয়েছে, ভারতীয় রেলওয়ে পরিচালিত ট্রেনে পণ্যবাহী কনটেইনারগুলোর ব্যবস্থাপনায় থাকবে কনটেইনার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া। পেট্রাপোল কিংবা গেদের স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশের আগে শুল্ক প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য ভারতের যেকোনো অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে ওই ট্রেন থামবে। শুল্ক স্টেশনে ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পণ্য এবং ট্রেনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। যাতে কোনো অবৈধ বা অনুমোদনহীন পণ্য প্রবেশ করতে না পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড-১৯–এর সময় সরবরাহব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে ভারত ট্রেনে করে পণ্য পাঠিয়েছিল। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত ট্রেনে করে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, গত মার্চে দিল্লিতে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে রেলে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় উভয় পক্ষ রেলওয়ে অবকাঠামো, বন্দর অবকাঠামো, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির ওপর একটি যৌথ সমীক্ষা এবং বহুমাত্রিক পরিবহনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযুক্তি সম্প্রসারণের ওপর জোর দেয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কনটেইনার সার্ভিসে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাংলাদেশের জন্য শুধু প্রতিবেশী ভারতে সীমিত থাকবে না। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী অন্য দেশেও পণ্য পরিবহনের সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল পণ্য, হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্য, প্লাস্টিকের পাশাপাশি পচনশীল পণ্যও কনটেইনার সার্ভিসের মাধ্যমে পরিবহন করা যাবে।
কোভিড-১৯–এর সময় সরবরাহব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে ভারত ট্রেনে করে পণ্য পাঠিয়েছিল। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত ট্রেনে করে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সই হলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি ১৮২ শতাংশ বাড়বে। আর সংযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতে রপ্তানির হার ২৯৭ শতাংশ বাড়াতে পারবে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মার্চে ‘কানেকটিং টু থ্রাইভ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপুরচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
দুই দেশের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় অতীতের রেল সংযোগগুলো চালু করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে জোর দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ও বিরল-রাধিকাপুর পুরোপুরি সচল। এর মধ্যে দর্শনা-গেদে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) রুট-১, রহনপুর-সিংগাবাদ টিএআর-২ রুট হিসেবে চিহ্নিত।
ওই দুটি রুট ব্যবহার করেই ট্রেনে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি হয়। নতুন আদেশের ফলে এখন ভারতীয় পণ্য খালাসের পর ফিরতি ট্রেনে বাংলাদেশি পণ্যও ওই দুটি রুটে ভারতে রপ্তানি হবে।