ঠাকুরগাঁওয়ে হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে সবজি

ঠাকুরগাঁওয়ে নানা জাতের সবজির ব্যাপক ফলন হলেও হিমাগার না থাকায় তা সংরক্ষণ করতে পারছেন না চাষিরা। এ কারণে কম দামেই সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। নয়তো খেতের সবজি খেতেই নষ্ট করছেন বা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।
জেলা কাঁচামাল আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি সেলিম রেজা জানান, শুধু ঠাকুরগাঁও জেলায় বছরে উৎপাদিত সবজির মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু সবজি সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা নেই। ফলে উৎপাদিত সবজির এক-তৃতীয়াংশই নষ্ট হচ্ছে।
সমিতির সদস্য দিলীপ কুমার দে জানান, জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য ১৫টি হিমাগার থাকলেও সবজি সংরক্ষণের কোনো হিমাগার নেই। এখানে সবজির জন্য হিমাগার নির্মাণ করা হলে কৃষকেরা ধীরে ধীরে বাজারে সবজি এনে পরে সময়মতো ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারতেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলায় গত বছর রবি মৌসুমে (শীতকালীন) ছয় হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমিতে এক লাখ ১৭ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করা হয়। খরিপ মৌসুমে (গ্রীষ্মকালীন) আবাদ হয় তিন হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার গড়েয়া, নারগুন, সালন্দর ও আকচায় ব্যাপক সবজি আবাদ হয়। এ ছাড়া রানীশংকৈল, হরিপুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার বিস্তর এলাকায় সবজি আবাদ হচ্ছে। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, করলা, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, শিম, চিচিঙ্গা, বরবটি, লাউ প্রভৃতি।
নারগুন গ্রামের ফুলকপিচাষি মানিক মিয়া বলেন, বাজারে ফুলকপির দাম ২০ টাকা হলেও আমরা আট-দশ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হই। এর কারণ হলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা।
একই উপজেলার শিবগঞ্জের শাদের আলী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের সময় বাজারে সবজির চাহিদা না থাকায় আমার খেতের এক-তৃতীয়াংশ করলা নষ্ট হয়ে গেছে। হিমাগার থাকলে সবজি সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করতে পারতাম।’
সদর উপজেলার কহরপাড়া গ্রামের চাষি মহির উদ্দিন জানান, মৌসুমের শেষ দিকে খেত থেকে সবজি তুলে বাজারে নিতে যে পরিবহন খরচ হয়, তা সবজি বিক্রি করেও তোলা যায় না। তাই খেতের সবজি খেতেই নষ্ট করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে অতিরিক্ত আরও দুই মাস বাজারে সবজি সরবরাহ করা যায়।
হিমাগার স্থাপনের ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী বলেন, জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সবজি হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালক মো. বেলায়েত হোসেন জানান, এ অঞ্চলের সবজি সংরক্ষণের বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। ভবিষ্যতে হিমাগার গড়ে উঠতে পারে।