ভাসানচরের অদূরে বঙ্গোপসাগরে ডুবতে থাকা লাইটার জাহাজটি:
ছবি: সংগৃহীত

‘জাহাজের ডেকে হাঁটুপানি উঠে গেছে। আমরা ডুবে যাচ্ছি। আমাদের বাঁচান।’ নোয়াখালীর ভাসানচরের অদূরে বঙ্গোপসাগরে ডুবতে থাকা ‘এমভি ফুলতলা-১’ নামের একটি লাইটার জাহাজের মাস্টার বেতারবার্তায় এভাবেই সাহায্যের প্রার্থনা করছিলেন।

এ সময় বেশ কিছু দূর এগিয়ে থাকা ‘এমভি আল মুনতাকিম’ জাহাজের মাস্টার বেতারবার্তায় এই আকুতি শোনেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর জাহাজটি পেছনে ঘুরিয়ে দুর্ঘটনাস্থলের কাছে নিয়ে যান। অবশেষে আল মুনতাকিম জাহাজে উঠে বেঁচে যান এমভি ফুলতলা-১ জাহাজের ১৪ জন নাবিক-শ্রমিক।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজ থেকে প্রায় এক হাজার টন মটর ডাল নিয়ে যশোরের নোয়াপাড়া যাওয়ার পথে আজ শনিবার সকালে ভাসানচরের অদূরে বঙ্গোপসাগরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার শিকার জাহাজের নাবিকেরা জানান, ৩ জুলাই ওই স্থানে একটি বালুবাহী নৌযান ডুবে যায়। সেখানে কোনো চিহ্ন না থাকায় ডুবন্ত নৌযানটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁদের জাহাজের তলা ফেটে ডুবে যায়।

নাবিকদের উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে এমভি আল মুনতাকিম জাহাজের মাস্টার মো. শিহাব কাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটির অনেক সামনে ছিলাম আমরা। বেতারবার্তায় দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে সাহায্যের আকুল আবেদন শুনে আমাদের জাহাজটি পেছনের দিকে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি জাহাজটির ডেকে পানি উঠে গেছে; প্রায় ডুবে যাচ্ছিল জাহাজটি। তাৎক্ষণিকভাবে ১৪ জনকে উদ্ধার করি। তারা এখন নিরাপদে আছে।’

ডুবে যাওয়া জাহাজ এমভি ফুলতলা-১-এর সুকানি মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার সকাল আটটার দিকে ডুবে থাকা একটি বালুবাহী নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আমাদের জাহাজের তলা ফেটে যায়। চেষ্টা করেও জাহাজটি রক্ষা করা যায়নি। সকাল ১০টার দিকে একপর্যায়ে ডেকে পানি উঠলে ভিএইচএফে (রেডিও বার্তায়) সাহায্য চান জাহাজটির মাস্টার। এ সময় আল মুনতাকিম নামের জাহাজের মাস্টার আমাদের বাঁচাতে জাহাজটি নিয়ে আসেন। আমরা প্রাণে রক্ষা পাই।’

বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি নবী আলম প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে ওই স্থানে বালুবাহী নৌযান ডুবে যাওয়ার পর কোনো চিহ্ন না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে একই স্থানে একাধিক দুর্ঘটনায় দুটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার উপপরিচালক মো. সেলিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ডুবে যাওয়া জাহাজটি পরিচালনা করছে যমুনা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি। কোম্পানির অংশীদার আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তো সবই শেষ। ডুবে যাওয়ার পর জাহাজটি কী অবস্থায় আছে তা জানতে ডুবুরি পাঠানো হচ্ছে। এরপরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’