ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ দশমিক ২ শতাংশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে। বাকি ৮৯ দশমিক ৮ শতাংশ তা কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের করা এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। গত রোববার জরিপের এই ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩০ জন শিক্ষার্থী গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীর (ছাত্র ৬৬৩ ও ছাত্রী ৩৩৭) ওপর এই জরিপ চালান। এঁদের প্রায় সবাই ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী। ২০টি প্রশ্নের ভিত্তিতে জরিপ করা হয়।
জরিপের ফল প্রকাশ করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারপারসন তুরিন আফরোজ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এ সন্ত্রাসবাদের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে, সেটি ধরেই তাঁরা জরিপ করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি জঙ্গি হামলার পর তরুণদের জড়িয়ে কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তরুণেরা কী বলেন সেটা শোনার জন্যই জরিপটি করা হয়।
জরিপের ফলাফল-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। বাস্তবতার নিরিখে এই সত্যটি মেনে নিতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ১০ শতাংশ তরুণের সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার যে তথ্য জরিপে এসেছে, সেটা তাঁর কাছে অতিরিক্ত মনে হচ্ছে। তবে এ ধরনের তথ্য এসে থাকলে এ বিষয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে তরুণদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি। ৩৭ দশমিক ৬ ভাগ শিক্ষার্থী মনে করে, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি।
জরিপে সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতা। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতাই হচ্ছে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত হওয়ার অন্যতম মূল কারণ। দ্বিতীয় কারণ হলো রাজনৈতিক উসকানি। ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করে, রাজনৈতিক উসকানি সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্ররোচিত করে থাকে। ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ মনে করে, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা তরুণ সমাজকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত করে। এ ছাড়া ধর্মীয় অজ্ঞতা, সামাজিক হতাশা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি প্রভাব ফেলে। ৭১ শতাংশ মনে করে, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে।