ঢাবির সূর্য সেন হলে নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিচার দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিচার দাবি করেছে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) কার্যকর না থাকায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-নির্যাতন বেড়ে গেছে বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সত্বর ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন না দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। আবাসিক হলগুলোতে চলমান নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদ ও সূর্য সেন হলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা রাতভর শিক্ষার্থী-নির্যাতনের বিচারের দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মূলত ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
গত রোববার রাত আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত সূর্য সেন হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. আরিফুল ইসলাম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র তরিকুল ইসলামকে মারধর করেন একই হলের দুই ছাত্রলীগ কর্মী। তাঁরা হলেন ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত উল্লাহ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে অর্পণ। এর আগে তাঁরা ২০১৮ সালের জুলাইয়ে একটি মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। আরিফুল ও তরিকুল তৃতীয় বর্ষে (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) অধ্যয়নরত। অন্যদিকে অভিযুক্ত সিফাত উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ এবং মাহমুদুর ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাংগুয়েজেস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
সূর্য সেন হলে শিক্ষার্থী-নির্যাতনের প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একটি কারাগারে পরিণত হচ্ছে। এখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার এখানে লুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। ডাকসু কার্যকর না থাকায় হলগুলোতে নির্যাতনের পুরোনো ঐতিহ্য আবার নতুন করে চালু হচ্ছে। সূর্য সেন হলে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না করা হলে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচার দেশের আইন-আদালত করবে।
আকরাম হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি হবে, হলের মধ্যে দু-একজন পদে আসবে। সেই পদ দিয়ে তাঁরা চাঁদাবাজি ও মাস্তানি করবেন। সেগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট বাদ দিয়ে জোর করে কর্মসূচিতে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটি বন্ধ করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। এটি না করা হলে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। নির্যাতনের ঘটনার বিচার করা না হলে আগামী দিনে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তখন এই উপাচার্য-প্রক্টর কী জবাব দেবেন? কাজেই অন্যায়-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁদের সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশে আকরাম বলেন, ডাকসু নির্বাচন হওয়ার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-নির্যাতনের মাত্রা কমেছিল, গণরুম-গেস্টরুমের নির্যাতন কমে এসেছিল এবং শিক্ষার্থীরা কথা বলতে শিখেছেন। ডাকসু কার্যকর না থাকায় এখন নির্যাতন বেড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সত্বর ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন না দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহউদ্দিন বলেন, ‘শুধু সূর্য সেন হলই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ক্যাম্পাসেও এ ধরনের ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। এই নির্যাতনগুলো সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র জোটের কর্মী সাদিক মাহবুব ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের গদি নিয়েই বেশি চিন্তিত, তবু আমরা আশা করছি যে সূর্য সেন হলের ঘটনাসহ অন্য নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার হবে।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি আসিফ মাহমুদ বক্তব্য দেন।