তালগাছ উঁকি মারে আকাশে
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তালগাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে।’ অন্যদিকে শতবর্ষী তালগাছের গুরুত্ব তুলে ধরে খনার বচনে পাওয়া যায়, ‘এক পুরুষে রোপে তাল, অন্য পুরুষি করে পাল। তারপর যে সে খাবে, তিন পুরুষে ফল পাবে।’
কয়েক দশক আগেও গ্রামে সারি সারি তালগাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ত। তবে এমন দৃশ্য এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তালগাছের উপস্থিতি কমে গেছে। এখন গ্রামের আঁকাবাঁকা পথে সারা দিন ঘুরে বেড়ালেও তালগাছের দেখা পাওয়া দুষ্কর। তবে চোখ জুড়ানো দৃশ্যের দেখা মেলে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কে।
নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নে ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়ক। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে সারি সারি তালগাছ। স্থানীয় মানুষের কাছে এই সড়ক এখন তালতলী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সড়কটির দুই ধারে প্রায় পাঁচ হাজার তালগাছ আছে। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি এটি এখন পরিণত হয়েছে বিনোদনকেন্দ্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এর ছবি ও ভিডিও পৌঁছেছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে। নির্মল বাতাস আর তালগাছের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন বিনোদনপ্রেমীরা।
একসময় ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল মেঠো পথ। আশির দশকে হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কাঁচা ওই সড়কের দুই ধারে তালগাছগুলো রোপণ করেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ-১ আসনের সাংসদ সাধন চন্দ্র মজুমদার। প্রায় ৩০ বছর আগে লাগানো সেই তালগাছগুলো এখন বড় হওয়ায় সড়কটিতে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছ। গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে সড়কটি পাকা করা হয়।
নিয়ামতপুরে তালগাছের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে চাইলে ট্রেন কিংবা সড়ক পথে নওগাঁ কিংবা রাজশাহী শহরে যেতে হবে। এরপর সেখান সড়কপথে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা অটোরিকশায় চড়ে ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কে যেতে পারবেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিয়ামতপুরের তালতলী সড়কের মতো একসময় পুরো নওগাঁ জেলার গ্রামগঞ্জে তালগাছের সারি দেখা যেত। এর মধ্যে স্ত্রী প্রজাতির তালগাছে ছোটবড় নানা ধরনের তাল ধরত। ভাদ্র মাসে তাল পাকার সময়। তখন গ্রামের বাড়ি বাড়ি তাল পিঠার উৎসব হতো। তালের পিঠা খাওয়াতে মেয়ে ও জামাই এবং আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করা হতো। তবে এখন আগের মতো তালগাছ না থাকায় তাল পিঠার উৎসব আর চোখে পড়ে না।
কৃষিবিদদের ভাষ্য, তালগাছ রোপণের ১০ থেকে ১৫ বছর পর গাছে ফল ধরে। ভাদ্র মাসে ফল পাকতে শুরু করে। পাকা তাল প্রাকৃতিক নিয়মে গাছ থেকে ঝরে পড়ে। তবে এ সময় গাছের নিচ দিয়ে সাবধানে চলাই উত্তম।