তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া বেশি

মশাবাহিত ম্যালেরিয়া
প্রতীকী ছবি

দেশে গত বছর যতসংখ্যক ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার ৯০ শতাংশই হয়েছে তিন পার্বত্য জেলায়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে বান্দরবানে। তারপর রয়েছে যথাক্রমে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভাগীয় কীটতত্ত্ববিদ মো. মফিজুল হক শাহ বলেন, ‘দেশের মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই ম্যালেরিয়া আছে। এই বিভাগের মধ্যে বান্দরবানে ম্যালেরিয়া বেশি।’

গত বছর দেশে মোট ৭ হাজার ২০১ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়।

গত বছর বান্দরবান জেলায় শনাক্ত হয় ৫ হাজার ১২৮ জন ম্যালেরিয়া রোগী। রাঙামাটিতে ১ হাজার ৫৬৯ জন। খাগড়াছড়িতে ১০৪ জন। কক্সবাজারে ৩৫১ জন। চট্টগ্রাম জেলায় ৪৯ জন।

চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৬ জন মারা যায়। তারা পাহাড়ি এলাকা থেকে এই রোগ বহন করে জেলায় এসেছিল বলে জানান চিকিৎসকেরা। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন মারা যায় বান্দরবানে, একজন কক্সবাজারে।

২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। তবে দেশে এখনো হাজারো ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ২৫ এপ্রিল পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস’।

বিশ্বে প্রতিবছর মশাবাহিত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লাখো মানুষ মারা যায়। ২০২০ সালে ৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যায়।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে পাহাড়ের দুর্গমতার কারণে সেখানে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি সঠিক গতি পাচ্ছে না। এ ছাড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। জ্বর হলেও তারা সহজে হাসপাতালে যায় না।

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ছয়টি জেলায় ম্যালেরিয়া রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবানে গত বছর ৭২ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। বিশেষ করে বান্দরবানের থানচি, আলীকদম ও লামা উপজেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে।

গত বছর মোট শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৬০ জন জটিল বা সেরিব্র্যাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। বাকিরা অন্যান্য ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, গত বছর যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ জটিল বা সেরিব্র্যাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

গত বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে বেশি ছিল। ২০২০ সালে শনাক্ত রোগী ছিল ৬ হাজার ১০৪ জন। মারা যায় ৭ জন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল চট্টগ্রাম জেলার। বান্দরবানের ২ জন।

গত বছরের মতো ২০২০ সালেও বান্দরবানে ম্যালেরিয়া রোগী ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সংখ্যা ৪ হাজার ১৭৭ জন।

গত বছর তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী ছিল তুলনামূলক কম। এ সংখ্যা ১০৪। গত বছর এখানে কেউ মারা যায়নি।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, গত বছর হাসপাতালে সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছিল। তারা সবাই সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

পাহাড়ের বাইরে গত বছর কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সংখ্যা ৩৫১।

গত বছর ফেনীতে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে পার্বত্য জেলার সঙ্গে সংযোগের কারণে ফেনীকে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা হিসেবেই দেখা হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভাগীয় কীটতত্ত্ববিদ মো. মফিজুল হক শাহ বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের দুর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে হবে ধীরে ধীরে। এ ক্ষেত্রে বড় বাধা দুর্গম এলাকা। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকার অনেকে চিকিৎসার জন্য আসে না। এটা একটা সমস্যা।