তিন সপ্তাহেও উদ্ধার হননি অপহৃত সুফিউল

সুফিউল আনাম

ইয়েমেনে অপহৃত জাতিসংঘের কর্মকর্তা বাংলাদেশের নাগরিক এ কে এম সুফিউল আনামকে তিন সপ্তাহেও উদ্ধার করা যায়নি। তাঁর সঙ্গে জাতিসংঘের আরও চারজন কর্মী অপহৃত হয়েছিলেন। একটি জঙ্গিগোষ্ঠী তাঁদের মুক্তিপণ হিসেবে অর্থ দাবি করেছে বলে জানিয়েছেন সুফিউলের দুই সহকর্মী।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশ থেকে সুফিউলসহ জাতিসংঘের পাঁচ কর্মী অপহৃত হন। তিনি ছাড়া অন্যরা ইয়েমেনের নাগরিক। সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুফিউল ২০ বছর ধরে জাতিসংঘে কাজ করছেন। তিনি ইয়েমেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ষাটোর্ধ্ব সুফিউলের কিছুদিনের মধ্যেই অবসরে যাওয়ার কথা।

সুফিউলের পরিবার সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে সুফিউলের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চ পদে কর্মরত দুজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। সুফিউলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁদের মাধ্যমে কিছু তথ্য জানানো হয়।

সুফিউলের ঘনিষ্ঠ জাতিসংঘের ওই দুই কর্মকর্তার একজন প্রথম আলোকে বলেন, সুফিউলের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। আল-কায়েদা আরব পেনিনসুলা (একিউএপি) নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী এ অপহরণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা মুক্তিপণ হিসেবে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে। পাশাপাশি ইয়েমেনে জেলে আটক তাদের কিছু সদস্যকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

জাতিসংঘের হয়ে ইয়েমেন সরকার অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বলে আরেক কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সুফিউলের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা সুফিউলের বিষয়টি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের গোচরে এনে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

সুফিউলের মুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার বিষয়ে বাংলাদেশি ওই কর্মকর্তা বলেন, যে দেশের নাগরিক অপহৃত হয়েছে, মুক্তির বিষয়ে সে দেশকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হয়। বাংলাদেশ সরকার ইয়েমেন ছাড়াও কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ইয়েমেন সরকারকে এসব দেশ সহায়তা করছে।

ওই কর্মকর্তারা বলেন, এরই মধ্যে ২১ দিন হয়ে গেল সুফিউল অপহৃত হয়েছেন। এখন যদি বাংলাদেশ জোরালো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে কত দিন সুফিউলকে আটকে থাকতে হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এ বিষয়ে ঢাকা ও নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইয়েমেনে সুফিউল অপহৃত হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তবে যুদ্ধকবলিত দেশটিতে বাংলাদেশের ওই নাগরিকসহ অপহৃত কর্মকর্তাদের নিরাপদে উদ্ধারই একমাত্র অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।

সুফিউলের স্ত্রী ঢাকাতেই থাকেন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁরা বর্তমানে প্রবাসী। জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, সুফিউলের পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।

২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে যুদ্ধ চলে আসছে। সে সময় রাজধানী সানা আক্রমণ করে আবদ-রাব্বু মানসুর হাদির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে হুতি বিদ্রোহীরা। পরে ২০১৫ সালের মার্চে হাদি সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে দেশটিতে হস্তক্ষেপ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জোট।