দরিদ্র ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মানসিক চাপে, পোশাকশ্রমিকেরা আতঙ্কে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাঁদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, তাঁরা সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে আছেন। পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তীব্র মানসিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরাও। কাজ হারানোর ভয়ে পোশাকশ্রমিকেরাও আতঙ্কিত।

করোনার কারণে সামনের সারিতে থাকা (ফ্রন্টলাইন) স্বাস্থ্যকর্মী, বস্তিবাসী, পোশাকশ্রমিক এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত এবং আর্থিক বিষয়ে ছয়টি আলাদা জরিপে এই স্বাস্থ্যগত দিকটি উঠে এসেছে। ব্র্যাকের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএস), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এই গবেষণাগুলো করেছে। আজ শনিবার সকালে অনলাইন প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব গবেষণার ফলাফল গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরা হয়।

একটি গবেষণায় মুঠোফোনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ৬০ জন ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ৭৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী একটি করে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) পেয়েছে। তবে পিপিই পেলেও এর মান নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তীব্র মানসিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্যকর্মীরা উপযুক্ত মানের পিপিইর জরুরি প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। যাঁরা ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক ও মানসম্মত পিপিই সরবরাহ করতে হবে। ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য তাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। চীনের উহানে অনুসরণ করা ৭/১৪ মডেল (৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন পালন) অনুসারে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের পালা এবং পর্যায়ক্রমিক দায়িত্ব বণ্টন করতে হবে।

আরেক গবেষণায় জেপিজিএসপিএস জনজীবনের বিভিন্ন পর্যায়, যেমন মানুষজনের আয় বা উপার্জন, পুষ্টি, লিঙ্গ, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর কোভিড-১৯–এর প্রভাব অনুধাবনের জন্য বহুস্তরীয় গবেষণা পরিচালনা করেছে। প্রথম ধাপে মূলত ৬ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৯ জন মানুষের মুঠোফোনে সাক্ষাৎকার নিয়েছে। উত্তরদাতারা মূলত পোশাকশ্রমিক এবং শহুরে তরুণ।

গবেষণায় দেখা যায়, একেবারেই আয় উপার্জন নেই এমন গৃহস্থালির মানুষজন সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে আছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৮ শতাংশের আয় নেই। আংশিক আয় আছে ২৯ শতাংশের আর আয়ের ওপর কোনো প্রভাব নেই ১৩ শতাংশের।

উত্তরদাতা ৩৭ ভাগ বলছে, তারা প্রধানত ভাত, ডাল এবং আলু খেয়ে জীবনধারণ করছে। যেসব গৃহস্থালির লোকজন বাধ্য হয়ে পুষ্টিগত দিক বিচারে বৈচিত্র্যহীন খাবার খেয়ে বেঁচে আছে, তাদের মধ্যে বেশি মানসিক চাপ দেখা গেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং জ্ঞানের সার্বিক অবস্থা খুব একটা সুখকর না। গ্রামের এবং নারী তথ্যদাতারা করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায় তার মাধ্যমগুলো সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত কম জানে। নগরের এবং পুরুষ তথ্যদাতারা তুলনামূলক বেশি জানে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, নিম্ন আয়ের লোকদের খাবার ও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে। ভুল তথ্য ও সামাজিকভাবে হেয় করার বিষয়গুলো উল্লেখ করে সচেতনতা বাড়ানো ও জ্ঞান প্রচারের আরও সুযোগ রয়েছে। এই জাতীয় প্রচারণাগুলো আরও কার্যকরী করার জন্য নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভিত্তিক প্রচারণা চালাতে হবে।