দায়িত্বে অবহেলায় মেলেনি টিকিট, যাত্রীদের দুর্ভোগ

কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। টিকিট দেওয়া বন্ধ আছে। কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে বিদ্যুৎ নেই, তাই কম্পিউটার বন্ধ। পেট্রল না থাকায় জেনারেটরও চলছে না। বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত সমস্যার প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। এরই মধ্যে চারটি রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি করার পর আবার ছেড়ে গেছে। কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় প্ল্যাটফর্মে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া যাত্রীদের কিছুই করার ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে যাত্রীসেবার এই করুণ চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, কাউন্টারের কর্মরতদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তাঁরা টিকিট পাননি। তাই ট্রেনেও উঠতে পারেননি। এতে চারটি ট্রেনের অন্তত শতাধিক আসনযুক্ত টিকিট অবিক্রীত থেকে যায়। বিক্রি করা যায়নি আরও শতাধিক আসনবিহীন টিকিট। এভাবে বেলা পৌনে একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল।
স্টেশন মাস্টার অমৃত লাল বলেন, ‘জেনারেটর বন্ধ থাকার কথা নয়। বিষয়টি দেখছি।’
কাউন্টার সূত্র জানায়, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) এই স্টেশনের টিকিটসহ যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশ রেলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটরের মাধ্যমে সিস্টেম চালু রাখার কথা।
প্রতিষ্ঠানটি দুজন প্রকৌশলীর মাধ্যমে ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, সরারচর ও আশুগঞ্জ স্টেশনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির ওই পাঁচ স্টেশনের মূল কার্যালয় ভৈরব। অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎ চলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জেনারেটরের সাহায্যে টিকিট বিক্রির সেবা দিতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠান।
গতকাল বেলা একটার দিকে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ নেই। টিকিট কাউন্টারের জেনারেটরটিও বন্ধ আছে। সিএনএসের ভৈরব কার্যালয়ের মাঠ প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন ও সিস্টেম প্রকৌশলী মো. কাজল কর্মস্থলে নেই। প্রধান বুকিং সহকারী কিশোর নারায়ণ চৌধুরী ও স্টেশন মাস্টার অমৃত লালও তখন স্টেশনে ছিলেন না।
কিশোরগঞ্জগামী আন্তনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস বেলা একটায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস বেলা ১টা ১০ মিনিটে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস বেলা দেড়টায় এবং কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এগারসিন্দুর ট্রেনটি বেলা ২টা ২০ মিনিটে ভৈরব স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে আবার ছেড়ে যায়। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ না আসায় এবং জেনারেটর চালু না হওয়ায় কেউ এসব ট্রেনের যাত্রী হতে পারেনি।
ভোগান্তির শিকার কুলিয়ারচর উপজেলার বরখারচর গ্রামের শামিম মিয়া জানান, ঢাকায় যেতে চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়ার জন্য দেড় ঘণ্টা সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। শেষে টিকিট না পাওয়ার কারণে যেতে পারেননি।
প্রধান বুকিং সহকারী কিশোর নারায়ণ চৌধুরী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই সমস্যার বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা জামিল আক্তারও সমস্যার কারণ হিসেবে জেনারেটরে পেট্রল না থাকার অজুহাত দেখান।
জেনারেটর বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে সিস্টেম প্রকৌশলী মো. কাজল জানান, যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে আশুগঞ্জ স্টেশনে যেতে হয়েছে তাঁকে।
সিএনএস পেট্রল কিনে বেলা আড়াইটার দিকে জেনারেটর চালু করে। এরপর বুকিং কাউন্টার থেকে যাত্রীদের টিকিট দেওয়া শুরু হয়।