রাঙামাটি-কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে
ছবি: প্রথম আলো

উঁচুনিচু সড়ক ধরে এগিয়ে চলছে যানবাহন। সড়কের একদিকে ছোট-বড় সবুজ পাহাড়। অন্যদিকে হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশি।

সড়ক দিয়ে যেতে যেতে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। যাত্রাপথে থেমে সড়কের ধার কিংবা সেতুর ওপর দাঁড়িয়েও চোখজুড়ানো প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হওয়া যায়।

একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য সড়কের ধারে রয়েছে পর্যটন আবাস। সেখানে চাইলে রাত্রিযাপন করা যায়। হ্রদে কায়াটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। এমন নৈসর্গিক জায়গাটির নাম রাঙামাটি-কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়ক।

প্রায় এক যুগ আগে উদ্বোধন হয় সড়কটির। কিন্তু সড়কটিতে এখন আর আগের মতো যান চলাচল নেই। বলতে গেলে যান চলাচল কার্যত বন্ধ। কারণ, এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়ক ও সেতুর উন্নয়নকাজ চলছে। ফলে এ সড়ক ধরে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পর্যটকেরা সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এখন শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা অল্প দূরত্বে ভেঙে ভেঙে সড়কটি ব্যবহার করছেন। পর্যটক দু-একজন এলেও তাঁরা অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত ঘুরে ফেরত যাচ্ছেন।

২০২১ সালের শুরুতে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির সম্প্রসারণ ও সেতু মেরামতের কাজ শুরু হয়। সড়কটি নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় সড়ক প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে উন্নয়নকাজ করছে।

কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি ট্রেডার্স কাজের সময় বারবার বাড়িয়েছে। ফলে মার্চে সড়ক খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন জুন নাগাদ সড়কটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।

সড়কটিতে ছয়টি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সেতু মেরামত করা হচ্ছে। নতুন করে বড়ধাম এলাকায় আরেকটি নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বড়ধাম লাগোয়া সেতুটির নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। সেতুটির ওপরের ছাদের একাংশ ঢালাই হয়েছে। অপর তিনটি অংশও ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এলজিইডি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সড়কটির ওই অংশ বারবার ভেঙে যায়। এ জন্য একটি উঁচু সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কটি আগে ছিল কেবল সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির উপযোগী। এখন সড়কটি স্থানে স্থানে প্রায় ছয় ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হচ্ছে। ফলে অন্যান্য যানবাহনও সড়কটিতে চলতে পারবে।

জানতে চাইলে এলজিইডি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটি পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। আমরা দ্রুত সড়কটি খুলে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছি। আশা করছি, জুনের আগে সড়কটি খুলে দিতে পারব। সড়কটি নতুন করে সম্প্রসারণ করার কারণে পর্যটনের জন্য আরও ভালো হবে।’

রাঙামাটি-কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য
ছবি: প্রথম আলো

সড়কটির পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্র। বেড়াইন্না, বড়গাঙ, ইজোড়, বার্গিসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে প্রতি শীত ও বর্ষা মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখানে পর্যটন মৌসুমে পিকনিক করে। কিন্তু এখানে এক বছরের বেশি সময় ধরে পর্যটনকেন্দ্রিক এসব কার্যক্রমে ভাটা চলছে।

বেড়াইন্নার উদ্যোক্তা হিল্লোল চাকমা বলেন, ‘করোনার জন্য দুই বছর ধরে এমনিতেই ব্যবসা কম। তার ওপর এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি বন্ধ রাখায় আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। কাপ্তাইয়ের দিক থেকে হাতে গোনা পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু তাঁরা আর এ সড়ক ধরে রাঙামাটি যেতে পারেন না। ফলে আগের মতো পর্যটক নেই।’

গতকাল পড়ন্ত বিকেলে দেখা যায়, সড়কটির আসামবস্তি সেতুসহ কয়েকটি স্থানে দু-একজন পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলযোগে পাহাড় ও হ্রদঘেঁষা সড়কটি ধরে ঘুরছেন। মাঝেমধ্যে হ্রদের ধারে দাঁড়িয়ে কেউবা সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করছেন।