
মিরপুরের নবাবেরবাগ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বৃষ্টি মানেই দুর্ভোগ। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার সড়কগুলো ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ১৫ মিনিটের টানা বৃষ্টিই যথেষ্ট। আর বৃষ্টিপাতের সময় যদি আরেকটু প্রলম্বিত হয়, তাহলে সেই পানিতে ডুবতে থাকে বসতবাড়ি-দোকানঘর। কখনো কখনো পানি হয়ে যায় প্রায় কোমরসমান। সেই পানি নামতে লেগে যায় কয়েক দিন।
এবারের বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে এলাকার মানুষের ভোগান্তি মাত্রা ছাড়িয়েছে। একবারের বৃষ্টির পানি নামতে না-নামতেই আবার বৃষ্টি। তাই একপ্রকার জলে ডুবে আছে এখানকার কয়েক হাজার বাসিন্দার জীবন।
এলাকাবাসী বলছেন, এখানকার নালাগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় তা ভরাট হয়ে পানিনিষ্কাশনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই নালা উপচে পানি ঢুকে যাচ্ছে বাড়ির উঠানে, ডুবিয়ে দিচ্ছে বসতঘর। এতে বসবাস ও চলাফেরায় ভোগান্তিতে তো পড়তে হচ্ছেই, সেই সঙ্গে পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে ছড়াচ্ছে রোগবালাই।
নবাবেরবাগ এলাকাটি মিরপুর চিড়িয়াখানার পেছনে বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন।
গতকাল শনিবার বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে নবাবেরবাগ এলাকার কাছাকাছি আসতে কথা হলো দিলু হোসেনের সঙ্গে। নবাবেরবাগের যে জায়গায় জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি, সেই মধ্যপাড়ায় তাঁর বাড়ি রয়েছে। কিন্তু টানা জলাবদ্ধতার কারণে তিনি নিজের বাড়ি ছেড়ে এখন কাছাকাছি দূরত্বে একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন। দিলু হোসেন বলেন, ‘বাড়ি না ছাইড়্যা উপায় ছিল না। চলাফেরায় সমস্যা। একবার বৃষ্টি হইলে ঘরের বাসন-কোসন পর্যন্ত ভাইসা যায়। কোনোভাবে রান্ধাবাড়ার ব্যবস্থা করলেও দুর্গন্ধে খাওয়ার রুচি থাকে না।’
দিলু হোসেনের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁর দেখানো পথ ধরে জমে থাকা পানি মাড়িয়ে পৌঁছানো গেল মধ্যপাড়া এলাকায়। সেখানে গিয়েই চোখে পড়ল একটি বাড়ির ভেতর থেকে গামলা-বালতি দিয়ে পানি সেচে ফেলা হচ্ছে। ওই বাড়ির পাশেই একটি মুদিদোকানের সামনে প্রায় দুই ফুট উঁচু দেয়াল তুলে পানি আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দোকানি আসমা খাতুন জানালেন, দুই দিন আগের বৃষ্টিতে এই দেয়াল ছাপিয়ে পানি দোকানের ভেতরে ঢুকে যায়। পরে তিন-চার ঘণ্টায় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে দোকান থেকে পানি সেচে বের করেছেন।
আসমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এই প্রতিবেদককে ঘিরে নানা বয়সী মানুষের একটা ছোটখাটো ভিড় জমে গেল। সেখান থেকে হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘দুই বছর ধরে এলাকার ড্রেনগুলান পরিষ্কার করা হয় না। ভোটের পর এলাকার কাউন্সিলরের ডিউটি শেষ। বারবার খোঁজ কইরাও তাঁর নাগাল পাওয়া যায় না।’
বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেল, এবারের অতিবৃষ্টিতে প্রায় স্থায়ী রূপ পাওয়া এই জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে এলাকায় মশার উপদ্রব এবং ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলেও জানালেন অনেকে।
ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ শফি বললেন, ‘ঘর থেইক্যা একবার পানি সেইচ্যা ফেলতে না-ফেলতেই আবার বৃষ্টি। মরণ ছাড়া এই পানি থেইক্যা আমগোর মুক্তি নাই।’
এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতানের সঙ্গে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগেই এই এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার নালার পুরোটাই পরিষ্কার করা হয়েছে।
তাহলে জলাবদ্ধতার কারণ কী—এ প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, এই এলাকার বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার অন্যতম পথ বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন পাইপলাইনগুলো। দখলদারদের ফেলে রাখা মাটি-বালুর কারণে এগুলো বন্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন—জানতে চাইলে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘সেই দায়িত্ব আমার না। তবে আগামী ডিসেম্বর মাসে বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন স্লুইসগেটের সঙ্গে এখানকার ড্রেনেজ লাইনের সংযোগ স্থাপনের একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’