শুধু স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা পুষ্টির জায়গাতেই নয়, নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও নারীর অধিকারকে প্রাধান্য দিতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলেছেন, নারীর অংশীদারত্ব ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে জন্য সব ক্ষেত্রে নারীর কার্যকর অংশীদারত্বের কথা ভাবতে হবে। কোন বিষয়টি নারীর জন্য প্রয়োজন, সেটি বোঝা ও সরকারের নীতিমালায় এর প্রতিফলন রাখা জরুরি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি: ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নে নারীর অংশীদারত্বের অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক সভায় বিশিষ্টজনদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা অনুষ্ঠানে তোলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, বৈষম্য আছে, এটি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শহুরে সমাজের বাইরে বিশাল গ্রামীণ সমাজ থাকলেও তা অনেক সময় যথেষ্ট মনোযোগ পায় না। তাদের নিয়ে এগোতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই উত্থানের সময় যাতে সবকিছু স্থিতিশীল থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
নারীর প্রতি শ্রদ্ধা রাখা, তাদের প্রয়োজনকে বোঝা ও নীতিমালায় এর প্রতিফলন রাখার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান। তিনি বলেন, নারীর অন্তর্ভুক্তির মানে হচ্ছে তাদের কণ্ঠস্বরের অন্তর্ভুক্তি। তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নে অনেক সময় নারীবিষয়ক চিন্তাভাবনাকে পাশে রেখে দেওয়া হয়। বাজেট প্রণয়নের প্রথম থেকেই নারী–পুরুষের সমতা, নারীর প্রয়োজন মাথায় রেখে সব খাতে তা প্রতিফলিত করতে হবে। নারীর বিষয়কে প্রান্তিক না রেখে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, সরকার নারীবান্ধব আইন, নীতি, প্রকল্প করে দিতে পারবে। কিন্তু এককভাবে সরকার সবকিছু করতে পারবে না। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীর জন্য সরকারের অনেক উদ্যোগ আছে। কিন্তু সক্ষমতার বিষয়ও আছে। সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে ক্ষেত্রে মহিলা পরিষদসহ সবার ভূমিকা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে গর্ব করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ এশিয়ার ‘মিরাকল’ (বিস্ময়) হবে। কিন্তু এটা খতিয়ে দেখা হয় না ‘মিরাকল’ হতে শর্ত কী ছিল। তিনি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা উল্লেখ করে বলেন, সময় থাকতে যেন বাংলাদেশ সুশাসন কায়েম করে।
নারীর অধিকারের বিষয় শুধু নারীর নয়, এটা পুরুষেরও, পরিবার থেকেই সেই শিক্ষা দিতে হবে বলে মনে করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঠিক পথে আছে কি না, তার অন্যতম বিষয় হচ্ছে নারীর অংশীদারত্ব কতটা রয়েছে। দেশের ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অংশগ্রহণ কোন পর্যায়ে আছে, সেটাও দেখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর অংশীদারত্বের বিকল্প নেই। নারীদের যেকোনো পর্যায়ে মূল ধারায় রাখতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। ভিন্ন কোনো শক্তি যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। তিনি বলেন, নারী অধিকার নিয়ে নানা আইন হয়েছে। কিন্তু সঠিক প্রয়োগের অভাবে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সভায় মহিলা পরিষদের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী।