বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ (আরএমও) দুজন চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলে একজন নারী চিকিৎসককে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে দুই শিশুসন্তানসহ নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও রাজিয়া সুলতানাকে নিজ কক্ষে সন্তানসহ অবরুদ্ধ করে থানায় খবর দেওয়া হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কক্ষের তালা খুলে শিশুসন্তানসহ ওই নারী চিকিৎসককে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় হাসপাতালজুড়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
সোনাতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রশাসনের দাবি, সকাল ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিজ কক্ষে রোগী দেখছিলেন রাজিয়া সুলতানা। এ সময় দেড় ও তিন বছর বয়সী দুই শিশুসন্তানও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ভুল করে তাঁর কক্ষের চাবি ফেলে হাসপাতালে আসেন। নিজের কক্ষের তালা খুলতে রাজিয়ার কাছে তাঁর চাবি চাইতে গেলে রাজিয়া ক্ষুব্ধ হন।
বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে মেহেদীকে উদ্দেশ্য করে ফাইল ছুড়ে মারেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এ কে এম শরিফুল রেজওয়ান সেখানে গিয়ে মেহেদী হাসানের পক্ষ নিলে চিকিৎসক রাজিয়া তাঁকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনার পর চিকিৎসক রাজিয়াকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ দাবি করে দুই শিশুসন্তানসহ নিজ কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে রাজিয়া ও তাঁর দুই শিশুসন্তানকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে বাসায় পৌঁছে দেয়।
জানতে চাইলে চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
তবে শরিফুল রেজওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেদী ভুল করে তাঁর কক্ষের চাবি বাসায় ফেলে আসেন। বিকল্প চাবি ছিল রাজিয়ার কাছে। সেটা চাইতে গেলে রাজিয়া প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি মেহেদীকে লক্ষ্য করে টেবিলে থাকা জিনিসপত্র ছুড়ে মারেন এবং মেহেদীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। হট্টগোল শুনে আমি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে রাজিয়া ক্ষুদ্ধ হয়ে আমাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। রাজিয়া মানসিক রোগী। তাঁর বিরুদ্ধে “পাগলামি”র অভিযোগ নতুন নয়। গত চার বছরে অন্তত আট দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ তাঁকে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগের পাহাড় জমেছে।’
সোনাতলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একজন নারী চিকিৎসক হাসপাতালে পাগলামি করছেন, তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে “স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ”র দেওয়া এমন সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসক রাজিয়াকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তালা খুলে ওই নারী চিকিৎসক এবং তাঁর দেড় ও তিন বছরের দুটি সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় নারী চিকিৎসককে অস্বাভাবিক কোনো আচরণ করতে দেখা যায়নি। উদ্ধারের পর নারী চিকিৎসক আমার কাছে অভিযোগ করেন, সহকর্মীরা তাঁকে “পাগল” আখ্যা দিয়ে সব সময় উত্ত্যক্ত করেন। বাবার মৃত্যুসহ পারিবারিক নানা কারণে তিনি হতাশায় ভুগছেন সত্যি, তবে “পাগল” নয়।’
এ বিষয়ে চিকিৎসক রাজিয়ার বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এহিয়া কামাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজিয়ার মানসিক সমস্যা আছে। গত দুই বছরে কর্মস্থলে একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁকে তিন দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজকের ঘটনায় তাঁকে সোনাতলা থেকে বদলির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি জেনেছি। আপাতত ওই নারী চিকিৎসককে অন্যত্র বদলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’