নিজেদের মূল্যায়নে পুলিশ ‘অসাধারণ’

চার ক্ষেত্রের তিনটিতেই অসাধারণ বা তার চেয়ে ভালো নম্বর পেয়েছে পুলিশ। একটিতে কিছুটা পিছিয়ে।

দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন জোরদারে পুলিশের ভূমিকা ‘অসাধারণ’, ক্ষেত্রবিশেষে অসাধারণের চেয়েও ভালো। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জঙ্গি দমনে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা আর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দু-একটা ক্ষেত্রে সামান্য পিছিয়ে আছে তারা।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিজেদের কাজ প্রসঙ্গে পুলিশের মূল্যায়নটা এমনই। পুলিশ এই মূল্যায়ন করেছে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির’ (এপিএ) আওতায়। এখানেই পুলিশ নিজস্ব মূল্যায়নে অসাধারণ বা অসাধারণের চেয়েও ভালো।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী থানা লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণে জেলা পুলিশের সঙ্গে, জেলা পুলিশ রেঞ্জের সঙ্গে আর রেঞ্জ সদর দপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রত্যেকের কাজের মূল্যায়নের ওপর নম্বর দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে ফল।

এপিএতে পুলিশ তাদের অর্জন হিসেবে যা বলছে, তা হলো জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, ৯৯৯, ই-প্রসিকিউশন এবং নির্বাচনকালীন পুলিশের শ্রম। এতে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে ১ লাখ ৩৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। তাঁরা কাজ করেছেন ১ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ২১৮ ঘণ্টা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জঙ্গি দমনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় পুলিশ বেশ কিছু খাতে ভালো করেছে। যেমন থানায় অপরাধবিরোধী সভা, জনসংযোগ সভামূলক কার্যক্রম, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে হাজতখানা সংস্কার ও অফিস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। তা ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের সেবা সহজ, অভিবাসনে আসা ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৫ মিনিট সময় দেওয়া, ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে মামলা লিপিবদ্ধ করা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, শিশু হেল্প ডেস্কে আসা সাহায্য প্রার্থীর সমস্যা নিষ্পত্তি, বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত ব্যবস্থাপনায় ডিএনএ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রতিবেদন দেওয়াতে পুলিশ ছিল অসাধারণ। আর অসাধারণের চেয়েও ভালো করেছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায়।

পুলিশ নিজেদের কোন কাজে কত নম্বর দিল

চারটি খাতে পুলিশ নিজেদের নম্বর দিয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন জোরদার করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জঙ্গি দমনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা সহজ করা এবং জনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ। অপরাধের তথ্যদাতার কথা শোনায় ১০০ ছিল ‘অসাধারণ’ মান। এতে পুলিশ নিজেদের ১০০-তে ১০০ দিয়েছে। অপরাধের তথ্য পাওয়ার পর অনুসন্ধান, শিশু পাচার ও বাল্যবিবাহ রোধে তথ্য পাওয়াতেও পুলিশ ১০০তে ১০০। পুলিশের পারফরম্যান্স অসাধারণের চেয়েও ভালো। সাধারণ ডায়েরির অনুসন্ধানে অসাধারণ মান হলো ৮০, পুলিশ বলছে তাদের অর্জন ৮৭.৯৯। অধর্তব্য অপরাধে অসাধারণ মান ৬০, পুলিশ পেয়েছে ৬৪.৫৭. ধর্তব্য অপরাধে অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা রুজুর ক্ষেত্রে অসাধারণ মান ৫০, পুলিশ পেয়েছে ৭৩.৪২, ১৫০ দিনে অভিযোগপত্র দেওয়ায় অসাধারণ মান ৮০, পুলিশের অর্জন ৮৬.৮৩, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলে অসাধারণ মান ৯০, পুলিশ পেয়েছে ৯৩.০৪, সমন জারি, সাক্ষী হাজিরেও পুলিশ অসাধারণের চেয়েও ভালো। এ খাতে অসাধারণ মান ছিল ৮০, পুলিশের অর্জন ৮৩.৪৪।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত চিত্র এই মূল্যায়নে উঠে আসেনি। অপরাধের সব তথ্য শুনে ব্যবস্থা নেওয়া বা সাধারণ ডায়েরি করলে অনুসন্ধান করার যে দাবি পুলিশ করছে, তা ঠিক নয়। খুন, বড় ধরনের ডাকাতি বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলে থানা মামলা নেয়, তদন্তের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এর বাইরে যে অপরাধগুলো ঘটে, সেখানে থানা মামলা নিতে গড়িমসি করে। সাধারণ ডায়েরির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

তবে গণশুনানি বা ওপেন হাউস ডে, মাদকবিরোধী অভিযান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শিশু হেল্প ডেস্ক পরিদর্শনে পুলিশের কর্মকৃতি আশানুরূপ ছিল না। মাদকবিরোধী অভিযান, মানব পাচার ও সীমান্ত জেলায় অভিযান, যানবাহনের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মান ১০০-এর নিচে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যে দাবি করছে তার সত্যতা যাচাইয়ের দুটি পন্থা আছে। প্রথমটি হলো, পুলিশ যতগুলো মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে, তার মধ্যে কতগুলোয় শেষ পর্যন্ত রায় হচ্ছে। রায়ের হারই বলে দেয় পুলিশ অপরাধের তথ্য শুনে যে ব্যবস্থা নিয়েছে, যেভাবে অনুসন্ধান করেছে, তা ঠিক ছিল কি না। আর দ্বিতীয়ত, কতগুলো মামলায় তারা অভিযোগ দিতে পারেনি, তার হিসাব নেওয়া। এই তথ্য পুলিশ কখনোই প্রকাশ করে না।

প্রসঙ্গত, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের তথ্য হলো সংস্থাটি (সিআইডি) ৮২ শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দিয়েছে, অভিযোগপত্র অনুযায়ী রায় হয়েছে ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে।