নিরপেক্ষ সরকারের কথাও সংলাপের আলোচনায় এল

  • মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, তাদের সন্তান বা পরিবারের কেউ যেন নির্বাচন কমিশনে আসতে না পারে, সে দাবি তুলেছে তরীকত ফেডারেশন।

  • সার্চ কমিটি গঠনের আগে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করার কথাও সংলাপে বলেছে তরীকত ফেডারেশন।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ। সোমবার বঙ্গভবনে
ছবি: পিআইডি

জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছে খেলাফত মজলিস। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছে দলটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়নে জোর দিয়েছে। তবে তারা মনে করছে, এবারের ইসি গঠন হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমেই। সে জন্য সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

গতকাল সোমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিয়ে খেলাফত মজলিস এবং তরীকত ফেডারেশন নিজ নিজ দলের প্রস্তাব পৃথকভাবে তুলে ধরে। তরীকত ফেডারেশন বঙ্গভবনে যায় বিকেল চারটার দিকে। আর খেলাফত মজলিস যায় সন্ধ্যায় ছয়টার দিকে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে খেলাফত মজলিস।

খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতি এমন পর্যায়ে গেছে যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অবিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব। বিগত বহু বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলে। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনই সর্বাধিক নিরপেক্ষ হয়েছে। এর আগে বা পরে আর কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও অবাধ বলে স্বীকৃত হয়নি।

নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে খেলাফত মজলিস পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছে দলটি। এর মধ্যে রয়েছে প্রথমত, সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনে সংবিধানে সংশোধনী আনা। দ্বিতীয়ত, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন। এই সরকার মূলত ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। অর্থাৎ তারা দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা দেবে। তৃতীয়ত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আলাপ–আলোচনা এখনই শুরু করা।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের সাত সদস্য সংলাপে অংশ নেন। তিনি হেফাজতে ইসলামেরও নেতা। গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে সহিংসতার পর তিনিও গ্রেপ্তার হন। ৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিলেন।

খেলাফত মজলিসের অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ইসি গঠনে সংবিধান অনুসারে আইন প্রণয়ন করা। কারা নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, সে বিষয়েও মত দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনে সারা দেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার দাবি করেছে দলটি।

ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন ও নিরপেক্ষ সরকার—এই দুইয়ের মধ্যে কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘দুটোই।’

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন ইসি গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তরীকত ফেডারেশনের তিন প্রস্তাব

তরীকত ফেডারেশন রাষ্ট্রপতির সংলাপে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। ১. সংবিধান মেনে ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন। ২. মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, তাদের সন্তান বা পরিবারের কেউ যেন নির্বাচন কমিশনে আসতে না পারে। সার্চ কমিটি গঠন করা হলে তাতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, একজন সাবেক সচিব, একজন শিক্ষক ও একজন সাংবাদিককে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। সার্চ কমিটি গঠনের আগে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেছে তরীকত ফেডারেশন।

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপ শেষে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সাংবাদিকদের বলেন, ৫০ বছরে কোনো সরকারই ইসি গঠনে আইনটি প্রণয়ন করেনি। রাষ্ট্রপতিও এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনিও একমত হয়েছেন যে আইন হওয়া উচিত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কথা বলবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।