পরীমনির বাসা থেকে জব্দ মদে অ্যালকোহল ১১–১৫%

গত বছর ৪ আগস্ট বনানীর ১২ নম্বর রোডে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে এই অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব
ফাইল ছবি

চিত্রনায়িকা শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির বনানীর বাসা থেকে র‌্যাব বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাড়ে ১৮ লিটার মদ জব্দ করার কথা জানিয়েছিল। রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জব্দকৃত এসব মদে অ্যালকোহলের পরিমাণ ছিল ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। যদিও মামলায় এর কয়েক গুণ অ্যালকোহল থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

আদালত সূত্র প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আদালতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দেওয়া অভিযোগপত্র ও অন্যান্য নথি পড়ে দেখা গেছে, গত ৪ আগস্ট পরীমনির বাসায় র‌্যাব–১ যখন তল্লাশি চালায়, তখন সেই দলের একমাত্র নারী সদস্য ছিলেন আনসার সদস্য মমতাজ বেগম। তিনি মামলার জব্দতালিকার সাক্ষীও। তবে ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে মমতাজ বেগম বলেছেন, অভিযানের সময় তিনি পরীমনি যে ভবনে ছিলেন, সেই ভবনের নিচতলার গ্যারেজে ছিলেন। ‘স্যাররা’ উপরে উঠেছিলেন।

মমতাজ বেগম বুধবার রাতেও প্রথম আলোকেও নিশ্চিত করেছেন, অভিযানের পুরো সময় তিনি গ্যারেজে ছিলেন। আলামত জব্দ করার পর তিনি সেগুলো দেখতে পান।

ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত কেউ জব্দতালিকার সাক্ষী হতে পারেন কি না জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল প্রথম আলোকে বলেন, কোনোভাবেই পারেন না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারায় এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।

পরী মনির বাসায় বিদেশি মদ ও মাদক পাওয়ার দাবি করেছিল র‌্যাব
ফাইল ছবি

পরীমনিকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে তিনি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করার পর। গত বছরের ১৩ জুন পরীমনি প্রথমে ফেসবুক পোস্টে এবং পরে লাইভে এসে এ অভিযোগ করলে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরদিন সাভার থানায় নাসির ইউ মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করে মামলা করেন পরীমনি। ওই দিনই নাসির ও তুহিনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এর দুই মাস পর গত বছর ৪ আগস্ট বনানীর ১২ নম্বর রোডে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে বিদেশি মদ ও মাদক জব্দের কথা জানানো হয়।

আলোচিত–সমালোচিত এই নায়িকার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেয় র‌্যাব। এই মামলায় পরদিন চার দিনের, ১০ আগস্ট দুই দিনের এবং ১৯ আগস্ট এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ২১ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই মামলায় এভাবে দফায় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। পরে গত ১ সেপ্টেম্বর জামিনে কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান পরীমনি।

  • সাড়ে ১৮ লিটার মদ জব্দ করার কথা জানিয়েছিল র‌্যাব।

  • আদতে এসবে অ্যালকোহলের পরিমাণ ছিল ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ।

  • মদ ছাড়াও মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, মডেম ও পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।

  • ডিজিটাল ডিভাইসগুলো কী কাজে লেগেছে, তা জানা যায়নি।

সাড়ে ১৮ লিটার মদে আসলে কী পাওয়া গেল

পরীমনির বনানীর বাসায় প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযান চালায় র‌্যাব। বনানী থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পরীমনির জিম্মা থেকে আট বোতল জনি ওয়াকার প্লাটিনাম লেবেল ব্লেন্ডেড স্কচ হুইস্কি, তিন বোতল জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল ব্লেন্ডেড স্কচ হুইস্কি, দুই বোতল শিভাস রিগ্যাল ব্লেন্ডেড স্কচ হুইস্কি, দুই বোতল দ্য গ্লেন লিভেট, একটি বোতলে গ্লেনফিডিক এবং দুটি বোতলে ফক্স গ্রোভ জব্দ করা হয়। এসব পানীয়র বোতলের গায়ে অ্যালকোহলের মাত্রা লেখা ছিল ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত।

র‌্যাব জানায়, প্রতি লিটার বিদেশি মদের আনুমানিক দাম ৯ হাজার টাকা করে সাড়ে ১৮ লিটার মদের দাম ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে চার গ্রাম আইস ও এক ব্লট এলএসডি জব্দ করা হয়। আইসের দাম ৪০ হাজার টাকা এবং এলএসডির দাম ৫ হাজার টাকা।

জব্দ আলামত পরে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সিআইডি সাতটি বোতলে রাখা তরল পদার্থ পরীক্ষা করে মতামত দেয়, এগুলোয় ১৪ দশমিক ২, ১২ দশমিক ৬, ১১ দশমিক ৭, ১২ দশমিক ১, ১৫ দশমিক ২ ও ১১ দশমিক ২ শতাংশ অ্যালকোহল পাওয়া গেছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পরীমনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে বিদেশি মদপানের অনুমতি নিয়েছিলেন। এর মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে তিনি আর এর মেয়াদ বাড়াননি। শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি কবে এই মদ কিনেছিলেন, অভিযোগপত্রে তার উল্লেখ নেই।

পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হলেও তাঁর কাছ থেকে চারটি ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি আইপ্যাড, একটি মেমোরি কার্ড, একটি মডেম, তিনটি ব্যাংক এটিএম কার্ড ও দুটি পাসপোর্ট জব্দের কথা উল্লেখ করে র‌্যাব। ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, মেমোরি কার্ড ও মডেম এই মামলার তদন্তে কীভাবে কাজে এসেছে, সে সম্পর্কে অভিযোগপত্রে কোনো তথ্য নেই। মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রের ভাষা একই। তিন দফা রিমান্ডে কী পাওয়া গেল, তা–ও উল্লেখ করা হয়নি।

তবে ওই সময় অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তাদের বরাত করে বিভিন্ন সংবাদপত্রে পরীমনির সঙ্গে কার কার যোগাযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমনকি একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে পরীমনির কেক কাটার ভিডিও ফাঁস হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, মদে অ্যালকোহলের পরিমাণ নির্ধারণের পরীক্ষা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, মেমোরি কার্ড, মডেম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় কী কাজে এল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব জবাব এখন দিতে পারব না।’