পল্লি চিকিৎসককে হাত-পা বেঁধে গ্রাম আদালতে হাজির!
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় গতকাল শনিবার আবদুস সালাম (৫৫) নামের এক পল্লি চিকিৎসকের হাত-পা বেঁধে ও পিটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রাম আদালতে হাজির করা হয়েছে। উপজেলার গোয়ালকান্দির ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের নোটিশ অবজ্ঞা করার অভিযোগে এ ঘটনা ঘটায় গ্রাম পুলিশ। পরে ইউপি কার্যালয় থেকে পুলিশ আহত অবস্থায় ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করে।
সপ্তাহখানেক আগে একই কায়দায় একজন কৃষককে ধরে নির্যাতন ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন ইউপি চেয়ারম্যান সালাম। ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কনোপাড়া গ্রামের পল্লি চিকিৎসক সালাম গতকালসকালে তালতলি বাজারে তাঁর ওষুধের দোকানে বসে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোয়ালকান্দি ইউপির আবদুর রহিম, জালাল উদ্দিন, আসলাম হোসেনসহ পাঁচজন গ্রাম পুলিশ তাঁর দোকানে আসেন। ইউপি চেয়ারম্যানের নোটিশ কেন অবহেলা করেছেন এবং কার্যালয়ে কেন হাজির হননি এ বিষয়ে কৈফিয়ত চান। তিনি নোটিশ পাননি বলে জানালে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে লাঠি দিয়ে মারধরের পর রশি দিয়ে হাত ও পা বেঁধে অটোভ্যানে করে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে চেয়ারম্যান আলমগীর তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ইউপি কার্যালয় থেকে আহত অবস্থায় সালামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন সালাম গতকাল দুপুরে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের গ্রামের সফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমাকে পরিষদে হাজির হতে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। অথচ চেয়ারম্যানের নির্দেশে চৌকিদারেরা (গ্রামপুলিশ) আমাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেন এবং পরিষদে নিয়ে যান।’
এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ রহিম ও জালাল বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁরা সালামকে ধরে আদালতে হাজির করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর বলেন, সালামকে তাঁর গ্রাম আদালতে হাজির হওয়ার জন্য চারটি নোটিশ দেওয়া হয়। হাজির না হওয়ায় গ্রাম পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সালামই গ্রাম পুলিশের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
এভাবে একজনকে ধরে গ্রাম আদালতে হাজির করাতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, গ্রাম আদালতের প্রতি লোকজনের আস্থা ফেরাতে এমনটি করা হয়েছে।
বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ গতকাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, খবর পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চেয়ারম্যানের গ্রাম আদালতে হাজির না হওয়ায় সালামের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলেছে। মামলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।