পাঁচ মাস পর বৈঠক করলেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা নেই
দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আজ সোমবার বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তবে এই বৈঠকে দেশের অর্থনীতির চলমান অস্থিরতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে শুধু একটি বিলের ওপর আলোচনা হয়।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করেছে, যার প্রভাব দেশেও পড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান দফায় দফায় কমানো হয়েছে, রিজার্ভ আগের চেয়ে কমেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ অর্থনীতির সম্ভাব্য সংকট নিয়ে নানামুখী আলোচনা চললেও অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কোনো সাড়াশব্দ নেই। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে সংসদীয় কমিটির মাসে অন্তত একটি বৈঠক করার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু পাঁচ মাস কোনো বৈঠক করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের পর আজ এই কমিটির বৈঠক হয়।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটির আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল, গত বৈঠকের কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস বিল’ পরীক্ষাকরণ ও বিবিধ। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে শুধু বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস বিল ২০২২’–এর ওপর আলোচনা করা হয়। পরবর্তী বৈঠকে অধিকতর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সংসদীয় কমিটির কাজ সংসদ থেকে পাঠানো যেকোনো বিল বা বিষয় পরীক্ষা করা এবং কমিটির আওতাধীন মন্ত্রণালয়ের কাজ পর্যালোচনা করা। মন্ত্রণালয়ের কাজ বা অনিয়ম ও গুরুতর অভিযোগ তদন্ত করা এবং কমিটি যথোপযুক্ত মনে করলে কমিটির আওতাধীন যেকোনো বিষয় সম্পর্কে পরীক্ষা ও সুপারিশ করতে পারে।
সংসদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদীয় কমিটি মানুষের ও দেশের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়কে কার্যকর সুপারিশ করতে পারে, দিকনির্দেশনা পেতে পারে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে সংসদীয় কমিটি সেটিও চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতিতে একধরনের অস্থিরতা চললেও সংসদীয় কমিটি নীরব থেকে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস বিল জাতীয় সংসদে তোলার সময় আপত্তি জানিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম। তাই তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য না হলেও বৈঠকে তাঁকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে তিনি প্রস্তাবিত আইনের একটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানান। ওই ধারায় আইনস্বীকৃত মুদ্রার বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রবর্তিত ইলেকট্রনিক মুদ্রার কথা বলা হয়েছে। ফখরুল ইমাম বৈঠকে অংশ নেওয়ায় কমিটির একজন সদস্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই সদস্য বলেন, কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, সংসদীয় কমিটি বৈঠকে কাউকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানাতে পারে। কিন্তু বৈঠকের কাজ শুরু হলে কমিটির সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ তাতে থাকতে পারেন না।
কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. আব্দুস শহীদ, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী এবং আহমেদ ফিরোজ কবির বৈঠকে অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেন ফখরুল ইমাম।