পাস করলেই জর্ডান

বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে পরীক্ষা দিচ্ছেন পোশাককর্মীরা l প্রথম আলো
বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে পরীক্ষা দিচ্ছেন পোশাককর্মীরা l প্রথম আলো

‘আইজ শুক্রবার, কারখানা বন্ধ। এই সুযোগে সকাল সকাল আইছি পরীক্ষা দিতে।’

বলছিলেন গাজীপুরের গার্মেন্ট শ্রমিক মনোয়ারা। তাঁর মতো শতাধিক নারী পোশাককর্মী মিরপুর-২-এ অবস্থিত বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে চলছে প্রথম পর্বের পরীক্ষা। ভবনের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, মগ্ন হয়ে জনা চল্লিশেক নারী সিঙ্গেল নিডেল মেশিনে সেলাই করছেন। কেউ শার্টের কলার যুক্ত করছেন, কেউ প্যান্টের পকেট। ঘুরে ঘুরে তা দেখছেন নিগার সুলতানা, জর্ডানের পোশাক কারখানা ক্ল্যাসিক অ্যাপারেলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দক্ষতার পরীক্ষা নিচ্ছি। দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে চাকরি নিশ্চিত। ভিসা খরচ, বিমানভাড়া, ওখানে থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা—সব খরচ কোম্পানি বহন করবে।’

 দক্ষ শ্রমিক যাচাই-বাছাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া দেখভাল করছে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল। এর প্রতিনিধি আবদুস সোবহান বলেন, বোয়েসেল সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে কর্মী পাঠাতে সাহায়তা করে। এখানে নারী কর্মীদের শুধু পাসপোর্ট করে এলেই হয়। এরপর আর কোনো খরচ নেই। মেয়েরা বিনা খরচে জর্ডানে চাকরি পাচ্ছে। প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কর্মী বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়া চলে। 

 চট্টগ্রামের সুমি শার্টের কলার ও প্যান্টের পকেট ঠিকঠাক সেলাই করতে পেরেছেন। তাঁর পরীক্ষায় টিকে গেছেন। অনুভূতি জানতে চাইলে বললেন, ‘খুব ভালা লাগতাছে। আমার বড় বইন জর্ডানের ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। হে কইছে ওইহানে মাইয়াগো কোনো সমস্যা নাই। ওভারটাইম কইরলে ডাবল টেহা। বেতনের পুরা টাহাই দেশত পাঠান যায়।’

শুক্রবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪০ জন পোশাককর্মীর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন ২০ জন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে জর্ডানের পোশাক কারখানাটির চুক্তি হচ্ছে। চুক্তিপত্রে দেখা যায়, প্রত্যেক কর্মীর মাসিক বেতন জর্ডানিয়ান মুদ্রায় ১১০ জেডি বা ১৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ওভারটাইম (অতিরিক্ত সময় কাজ করা) দুই ঘণ্টা। সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন। এক বছর সফলভাবে চাকরি করলে বেতন বাড়বে সাড়ে ৭ জেডি।

 ২০০০ সালে ৯৫ জনের যাত্রার মধ্য দিয়ে জর্ডানে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। ২০১২ সালে দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী বাড়তে থাকে।

জানতে চাইলে বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সাল থেকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বোয়েসেল জর্ডানে দক্ষ নারী কর্মী পাঠাচ্ছে। প্রত্যেক নারী কর্মীর সঙ্গে সাধারণত তিন বছরের চুক্তি করা হয় এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ীই প্রত্যেক কর্মী বেতন পান। প্রতিবছর গড়ে তাঁদের ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে বেতন বাড়তে থাকে। তিন বছর পর আগ্রহীরা জর্ডান যেতে চাইলে নিয়োগকর্তারা আবার তাঁদের নিয়ে যান।

জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৯১১ জন নারী কর্মী জর্ডানে গেছেন।