পোড়ার যন্ত্রণাতেও চিন্তা ভবিষ্যতের

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ কষ্ট পাচ্ছেন চোখের যন্ত্রণায়। সোমবার বেলা একটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ন বিভাগে
ছবি: সৌরভ দাশ

কালো একটি চশমা পরে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন আলী আহমদ। লাল হয়ে আছে এখনো চোখ। ঠিকমতো দেখতে পান না। কোমর থেকে নিচের অংশ ব্যান্ডেজে মোড়ানো। পোড়া ক্ষত শুকায়নি। আর কত দিন এভাবে হাসপাতালে থাকতে হবে, তা এখনই বলতে পারছেন না এই কাভার্ড ভ্যানের চালক। তবে তিনি প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলেও তাঁর সহকারী মো. সাকিব বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ।
সাকিব আলী আহমদের শ্যালক।

সাকিবকে ডেকে আনতে গিয়েই নিজেও বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন আলী আহমদ। বিস্ফোরণস্থলের কাছাকাছি থাকায় সাকিবের ভাগ্যে যে খারাপ কিছু ঘটেছে, তা অনুমেয়।

বেঁচে ফেরা আলী আহমদের ভাবনাজুড়ে এখন ভবিষ্যৎ চিন্তা। ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে আলী আহমদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আলী আহমদ ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার পর গাড়িটি নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যাই। তখনো সাকিব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন দেখছিল। গাড়ি রেখে আমি সাকিবকে ডাকতে ঘটনাস্থলের দিকে এগোচ্ছিলাম। সে আমার ১০-১৫ হাত সামনে ছিল। এমন সময় বিস্ফোরণ ঘটে।’
বিস্ফোরণে তাঁর শরীরের আট ভাগ পুড়ে গেছে। এখন ভালো করে দেখতে পান না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আলী আহমদ বলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং মা–বাবাকে নিয়ে তাঁর সংসার। চোখ ভালো না হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাড়ি চালাব? চিকিৎসকেরা বলেছেন ঠিক হয়ে যাবে।

হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া। স্বামীর চিন্তার পাশাপাশি ছোট ভাই সাকিবের নিখোঁজ হওয়াও তাঁকে পীড়া দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইটার ভাগ্যে কী ঘটেছে, জানি না। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছি।’

আলীর পাশের শয্যায় রয়েছেন ডিপোর কর্মচারী আমিরুল ইসলাম (৩৩)। তিনি আট বছর ধরে কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় কোমর, হাত ও পা পুড়ে যায়। চোখেও ঝাপসা দেখছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগের এই ব্যক্তিও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে দ্রুত কাজে ফিরতে চান তিনি। আমিরুল ইসলাম জানান, স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে তাঁর। সঙ্গে মা–বাবাও থাকেন। তাঁর একার ওপর সংসার চলে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে কতটা কাজ করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় কাজ করছে তাঁর মধ্যে।

ডিপোর নিরাপত্তা প্রহরী নূর আলমের (৪৭) ডান পা বেশি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া চোখ লাল হয়ে আছে এখনো। বাঁশখালীর পুঁইছড়ির এই ব্যক্তি ডিপো থেকে দেওয়া বাসায় থাকতেন। নূর আলমের স্ত্রী সেলিনা বলেন, দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসার। সন্তানেরা এখনো ছোট। সুস্থ না হলে খাব কী, জানি না।

চমেক বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক এস খালেদ বলেন, আহত ব্যক্তিরা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। সবাই কাজে ফিরতে পারবেন। তবে যাঁদের আঘাত বেশি, তাঁদের সমস্যা হবে।

ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৭ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৪ জন।

এদিকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। আ জ ম নাছির বিস্ফোরণে পা হারানো মো. হৃদয় এবং হাত হারানো মো. হযরত আলী ও মো. মারুফ হোসেনের চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন বলে জানান।