সমালোচনার মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলসহ বিভিন্ন দপ্তরে সাঁটানো প্রক্টরের ১৭ নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত রোববার ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আজ বিভিন্ন হল, বিভাগ ও দপ্তরে পৌঁছেছে।
১৭ নির্দেশনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীকে ফোন করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের সভাপতি ও আবাসিক হলের কয়েকজন প্রাধ্যক্ষও নির্দেশনা প্রত্যাহারের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্দেশনা প্রত্যাহারের চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবাগত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান নিয়মশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ অবহিত করা, র্যাগিংয়ের মতো অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বিধিনিষেধগুলো প্রচার করা হয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রচারিত কিছু বিধিনিষেধের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রশাসনের নজরে এসেছে। কিছু বিধিনিষেধ বিদ্যমান থাকলেও বাস্তবতার কারণে তার কার্যকারিতা ও প্রয়োগ নেই। ফলে বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য প্রচারিত বিধিনিষেধসংক্রান্ত পত্রটি প্রত্যাহার করা হলো।’
১৯ ডিসেম্বর ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বিধিবদ্ধ আইনের আলোকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিয়মশৃঙ্খলা’ শিরোনামে শিক্ষার্থীদের ১৭টি আবাসিক হলসহ বিভিন্ন দপ্তরে সাঁটানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে প্রতিটি নির্দেশনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩-এর বিভিন্ন ধারা ও উপধারাকে তথ্যসূত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা ভঙ্গ করলে যথোপযুক্ত জরিমানা ও শাস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে এবং ২৫ ডিসেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘হলে অবস্থানের বিষয়ে প্রক্টরের নির্দেশনা নিয়ে সমালোচনা’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, ছাত্রদের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাত ৯টা এবং বছরের অন্য সময়ে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত হলে অবস্থান করতে হবে। ছাত্রীদের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এবং গ্রীষ্মকালে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নিজ নিজ হলে অবস্থান করতে হবে। রাতের খাবারের পর প্রাধ্যক্ষ যেকোনো সময় ছাত্রদের রোল কল করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও বিভাগীয় সমিতি ব্যতীত কোনো ক্লাব, সমিতি কিংবা ছাত্রসংগঠন করতে পারবেন না। মেস বা বাসা পরিবর্তনের আগে প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
এই নির্দেশনা সাঁটানোর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি এর প্রতিবাদ জানান। তাঁরা এটাকে সেকেলে ও অধ্যাদেশবহির্ভূত মনগড়া আইন বলে আখ্যায়িত করেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা এই নির্দেশনা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন।