প্রথম আলো সাংবাদিকতার গুণমান আরও উচ্চে নিয়ে যাবে: সিমিন রহমান
করোনা মহামারিকালে প্রথম আলোর সাংবাদিকসহ সকল বিভাগের কর্মীরা সমন্বিত চেষ্টায় যেভাবে প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছেন, সে জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান। তিনি প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাঁর গভীর প্রত্যাশা ও বিশ্বাস ছিল প্রথম আলো শতবর্ষ অতিক্রম করে যাবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে প্রথম আলোর কর্মীরা ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার গুণমান ও নৈতিকতা আরও উচ্চপর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে তিনি অনুপ্রেরণা দেন।
৪ নভেম্বর থেকে বৈচিত্র্যময় কর্মসূচির ভেতর দিয়ে প্রথম আলো ২৩ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে। এর ধারাবাহিকতায় ট্রান্সকম গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রগতি ভবনে প্রথম আলোর কার্যালয়ে আসেন। তাঁর সঙ্গে ট্রান্সকম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও ছিলেন। প্রথমেই তিনি ১৩ তলার ফিচার ও গ্রাফিকস বিভাগে আসেন। সম্পাদক মতিউর রহমান জ্যেষ্ঠ কর্মীদের নিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কক্ষে প্রবেশ করতেই ধ্রুপদি নৃত্যের মধ্য দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান নাদিয়া ইসলাম, বন্যা সাহা,খন্দকার হাবিবা রহমান, মাধবী লতা ও আফসানা আহমেদ রিমঝিম। এরপর ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ গানটি গেয়ে শোনান রাশিদুজ্জামান, কবির হোসেন, আবুল হাসনাত, এ কে এম সাইফুল করিম, পার্থ কর, উজ্জ্বল মণ্ডল ও নাসির আহমেদ। সঞ্চালনা করেন ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন।
সেখানে সম্পাদক মতিউর রহমান জানান, এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে প্রথম আলোর প্রতিটি তলায় বিভাগগুলোর কর্মীরা প্রতিযোগিতাভিত্তিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করেছিল। সিমিন রহমান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এমন অভ্যর্থনায় তিনি সত্যি অভিভূত, বিস্মিত। প্রথম আলোর কর্মীদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা ছাড়াও যে এত বহুমুখী সৃজনশীল প্রতিভা রয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
এরপর দশম তলায় ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে সিমিন রহমান, মতিউর রহমানসহ ট্রান্সকম গ্রুপ ও প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীরা অংশ নেন। প্রথম আলোর কর্মীরাও অনলাইনে যুক্ত হন।
এই পর্বের সঞ্চালনা করেন মতিউর রহমান। তিনি ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিতে তিনি আমাদের মাঝে আসতেন। উৎসাহিত–অনুপ্রাণিত করতেন। সেরা কর্মীদের পুরস্কৃত করতেন। সশরীর না থাকলেও তাঁর নীতি-আদর্শ আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে।’ এ সময় লতিফুর রহমানের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
এরপর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরেন। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ ১৩ থেকে ২৩ নভেম্বর জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠেয় বিশেষ প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠান এবং পাঠক ও প্রথম আলোর কর্মীদের জন্য বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ যেসব আয়োজন করা হয়েছে, তা তুলে ধরেন।
সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক জানান, প্রথম আলোর বন্ধুসভার প্রায় ৮৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী বন্ধু এবার দেশজুড়ে ভালো কাজের নানা উদ্যোগ নিয়েছে। অনুষ্ঠান হচ্ছে ৯২টি স্থানে। এসব অনুষ্ঠানে দুজন করে স্থানীয় গুণী মানুষকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা মহামারির দুঃসময় অতিক্রম করে নতুন উদ্যমে কাজ করছে প্রথম আলোর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত সবাই।
অনলাইন প্রধান শওকত হোসেন বলেন, করোনাকালে অনলাইনের পাঠকসংখ্যা বেড়েছে। এখন আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম আলো একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে। বছরভর প্রতিকূলতা জয় করা, অনুপ্রেরণাময় যেসব জীবনকাহিনি, ঘটনার বিবরণ, দৃষ্টান্তের বয়ান প্রথম আলোতে ছাপা হয়, তার মধ্য থেকে বাছাই করে সেরা বিষয়টিকে নিয়ে তৈরি করা হয় এই প্রামাণ্যচিত্র। এবার ‘আয়রনম্যান’ নামের এই প্রামাণ্যচিত্র করা হয়েছে সামসুজ্জামান আরাফাতকে নিয়ে, যিনি সাঁতরে বাংলা চ্যানেল পার হয়েছেন, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা সীমান্ত পর্যন্ত দৌড় দিয়েছেন হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ। এটি নির্মাণ করেছেন চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি।
২০২১ সালের মিডিয়া জরিপে প্রথম আলোর অবস্থান তুলে ধরেন মোহাম্মদ মাসুদ। তিনি জানান, ছাপা কাগজের এখন প্রতিদিন পাঠকসংখ্যা ৫০ লাখ, সপ্তাহে কমপক্ষে একবার পড়েন ১ কোটি ৮ লাখ। বাংলা নিউজ পোর্টালে বিশ্বে প্রথম আলো প্রথম স্থানে।
সিমিন রহমান তাঁর বক্তব্যে লতিফুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, প্রথম আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান তিনি খুব উপভোগ করতেন। প্রথম আলো নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে দেশে সাংবাদিকতার যে উচ্চতম নৈতিক ও গুণগত মান অর্জন করেছে, তিনি এর প্রশংসা করতেন। প্রথম আলো ছিল তার একটি স্বপ্ন। দেশের মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়ে এই পত্রিকা শত বছর অতিক্রম করবে—গভীরভাবেই তিনি তা প্রত্যাশা করতেন, বিশ্বাস করতেন। সম্পাদক মতিউর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে প্রথম আলো যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে করোনা মহামারির দুঃসময় যেভাবে অতিক্রম করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।
সিমিন রহমান বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো তার কর্মীবৃন্দ। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এখানে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। সাংবাদিকসহ নানা পর্যায়ের কর্মীরাই এই প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। করোনার দুঃসময়ে প্রথম আলো কর্মীদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে এবং পরে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় করতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা সময়োপযোগী হয়েছে। ট্রান্সকম গ্রুপ সব সময় কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় করা ও সব সময় তাঁদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার প্রতি গুরুত্ব দেয়। তিনি প্রথম আলোর প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের ধন্যবাদ জানান এবং অতীতের মতোই আর্থিকসহ সকল সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। একই সঙ্গে প্রথম আলোর কর্মীরা সাংবাদিকতার গুণমান ও নৈতিক আদর্শকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের সেরা অদম্য সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার পাওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানান সিমিন রহমান।
এরপর সিমিন রহমানকে প্রথম আলোর পক্ষে উপহার দেন মতিউর রহমান, সুমনা শারমীন এবং হেড অব কনটেন্ট (ইংরেজি ওয়েব) আয়েশা কবির।
এ সময় ট্রান্সকম গ্রুপের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিচালক ফাইন্যান্স কামরুল ইসলাম, পরিচালক করপোরেট ফাইন্যান্স আবদুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক অপারেশন জাহিদুল ইসলাম ও এসকেএফের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
মতিউর রহমান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘লতিফুর রহমান যেমন স্বাধীনভাবে আমাদের কাজের সুযোগ দিয়েছিলেন, তাঁর প্রয়াণের এক বছরেরে বেশি সময় পরও আমরা একইভাবে কাজ করছি। নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোর কোনো বিষয়ে কোনো প্রভাব রাখতে চেষ্টা করেনি। এটা একটি বড় দিক। এ জন্য তাদের অভিনন্দন।
অন্য দিকে কর্মীদেরও অভিনন্দন, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় গত প্রায় দুই বছরের কঠিন সময় ভালোভাবে পার হয়ে আসতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘সামনে ২০২২ সালে আমাদের আরও ভালো থাকতে হবে, ভালো করতে হবে। প্রথম আলোর সামনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’ তিনি অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা গত ২৩ বছরে অনেক প্রতিকূলতা পার হয়ে এসেছি। আমাদের চেয়ারম্যান শতবর্ষে প্রথম আলোর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, দৃঢ় পায়ে সেই লক্ষ্যের দিকে প্রথম আলো এগিয়ে যাবে।’
মধ্যাহ্ন বিরতির পর সিমিন রহমান, মতিউর রহমান এবং ট্রান্সকম ও প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীরা ১৯ কারওয়ানবাজার ভবনের চতুর্থ তলায় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’র নতুন কার্যালয় ঘুরে দেখেন। এখানেও চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনির নেতৃত্বে কর্মীরা তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।