প্রান্তিক মানুষ উন্নয়নের জোয়ারে 'ভেসে যাচ্ছে'

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার বলছে, উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভেসে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী জনগণ, গরিব প্রান্তিক কৃষক, দলিত হরিজন, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, চা-বাগানের শ্রমিকসহ লাখ লাখ মানুষ এই কথিত উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে।’

৯ আগস্ট আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১৩১ জন মানুষ মারা গেল এবং ২০ হাজার পরিবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অথচ সরকারের সেখানে কোনো তৎপরতা নেই। সাজেকে ১৫ হাজার মানুষ খাদ্যাভাবে হাহাকার করছে, সেখানে ১০ হাজার টন খাদ্য দরকার। কিন্তু সরকার নির্বিকার।

সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওপর যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সঙ্গে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীন ও বৈরী আচরণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অস্তিত্বই হুমকির মুখে।

সভায় সন্তু লারমা ৬ থেকে ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবসের নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিবাসীদের বসবাস রয়েছে দেশের এমন সব জেলায় এই দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশ থেকে ‘আদিবাসীদের’ অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতাকে তিনি গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধস হিসেবে চিহ্নিত করেন।

সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সরকারি দলপন্থী লোকজন ছাড়া দেশে কেউ ভালো নেই। অথচ সবাই মিলে যুদ্ধ করে এই দেশটাকে স্বাধীন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘দেশে আদিবাসীরা থাকলেও তাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, কোনো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে আঞ্চলিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার গঠন পর্যন্ত করেছে। এ ধরনের বিধান বাদ দিয়ে জনসংহতি সমিতিসহ সব আঞ্চলিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।’

আদিবাসী পরিষদের সদস্যসচিব সঞ্জিব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী নুমান আহমেদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা ও রবীন্দ্রনাথ সরেন।